ঢাকা অফিস: দেশের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী এক সংসদ অধিবেশন বসছে আগামীকাল। এতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ। ইতিহাসের স্বল্পতম সময়ের জন্য বসবে এই সংসদের সপ্তম অধিবেশন। সাংবিধানিক বাধ্য-বাধকতার কারণে ডাকা এই অধিবেশন শনিবার বিকেল ৫টায় শুরু হয়ে এক থেকে দেড় ঘন্টা চলতে পারে। যেখানে সাংবাদিক ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতির সুযোগ থাকছে না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিও সীমিত করা হবে। উপস্থিত সংসদ সদস্যরাও করোনা ভাইরাসের সতর্কতা নির্দেশনা মেনেই সংসদ অধিবেশনে অংশ নিবেন। সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ সকল তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, সাংবিধানিক বাধ্য-বাধকতার কারণে আহ্বান করা এই অধিবেশন খুবই স্বল্প সময়ের জন্য বসবে। অধিবেশনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া নির্দেশনা মেনে চলা হবে। দূর্যোগ পরিস্থিতির কারণে সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকায় ত্রাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অধিবেশনে উপস্থিতি কম থাকবে। এদিকে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে অধিবেশনে স্বশরীরে উপস্থিত না হয়ে সংসদ টেলিভিশন থেকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সবার জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সংসদ অধিবেশন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত করা হবে। এ প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের সরাসরি সংসদে না এসে স্ব-স্ব স্থানে অবস্থান করে সংসদ টেলিভিশন থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত অধিবেশন কাভার করার জন্য বিনীত অনুরোধ করা হচ্ছে। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, এই অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকছে না। কোন বিল উত্থাপন ও পাসের সম্ভাবনা নেই। অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সংসদ অধিবেশন পরিচালনার জন্য সভাপতিমন্ডলী মনোনয়নের পর চলতি সংসদের সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফসহ অন্যান্যদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে অধিবেশন মূলতবি করা হবে। এরপর জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশ নিয়ে আলোচনা শেষে অধিবেশন সমাপ্ত হবে। এর আগে দিনের কার্যসূচীতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী সরকারী কর্ম কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন উত্থাপনের কর্মসূচী রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার ভয়াল থাবার কারণে একাদশ সংসদের সপ্তম অধিবেশন দেশের ইতিহাসে একেবারেই ব্যতিক্রম হবে। এই প্রথম ছুটির দিনে আহ্বান করা এই অধিবেশনে ৬০ থেকে ৭০ জনের উপস্থিতি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের বৈঠকের কোরাম পূরণ করতে সর্বনিম্ন ৬০ জনের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। আর সংসদের অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যসহ অন্যান্যদের শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য অধিবেশন চালানোর জন্য হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত থাকবেন। দর্শনার্থীদের উপস্থিত বন্ধ থাকবে। মন্ত্রী-এমপিদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। গণপূর্তেরও শুধু অপরিহার্য সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত থাকবেন। সাউন্ড সিস্টেম, সংসদ টেলিভিশন, বাংলাদেশ টেলিভিশন বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি কমাতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই অধিবেশন আয়োজনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্য-বাধকতার কারণে করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগেও সংসদের সপ্তম অধিবেশন আহ্বান করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ। এক অধিবেশন শেষ হওয়ার পর ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে আবার বসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশেষ ষষ্ঠ অধিবেশন শেষ হয়েছিল গত ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের অধিবেশন আহ্বানের বিধান রয়েছে।
দেশের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী সংসদ অধিবেশন বসছে আগামীকাল
0
Share.