করোনা ভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, চীনা রাষ্ট্রদূতকে তলব ফ্রান্সের

0

 ডেস্ক রিপোর্ট: চীনের বিরুদ্ধে পশ্চিমে ক্ষোভ বাড়ছে। সামনে আনা হচ্ছে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। চীনা রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ফ্রান্স। পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করছে তা নিয়ে চীনের এক নিবন্ধ প্রকাশের পর চীনের সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছেন ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ম্যাক্রোঁ করোনা ভাইরাসের প্রকোপ চীন যেভাবে মোকাবেলা করেছে তা নিয়ে আঙ্গুল তুলেছেন চীনের দিকে। ফিনানসিয়াল টাইমস পত্রিকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, চীন এই সঙ্কট অন্যদের থেকে ভালভাবে মোকাবেলা করেছে এটা বলা “অজ্ঞতা” হবে। তিনি বলেছেন, “কী ঘটেছে তা আমরা আসলে জানি না।” চীন থেকে এই ভাইরাস ছড়ালেও ইতিমধ্যে চীনের চেয়েও বেশি মানুষ মারা গেছে আমেরিকা ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে। চীনে মৃতের সংখ্যা নিয়ে এবং চীন কত দ্রুত তা মোকাবেলা করেছে বা অন্য দেশগুলোকে কত দ্রুত এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করেছে সন্দেহ প্রকাশ করেছে আমেরিকা এবং ব্রিটেনও। তবে চীনের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার জানিয়েছে, করোনায় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৪৯ জন মারা গেছে। অন্যদিকে আক্রান্ত হয়েছেন ২২ লাখ ৫০ হাজার ৪৬৩ জন।
এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ১০ হাজার ২১ জন।। মৃত্যু হয়েছে ৩৭ হাজার ১৫৮জনের। মৃতের সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইতালি। সবেচয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেনের জনগণ। ফ্রান্সে করোনা ভাইরাসে যত মানুষ মারা গেছে তার এক তৃতীয়াংশই বৃদ্ধ নিবাসের বাসিন্দা।
চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে কেন এই সংঘাত? ফ্রান্সে কোভিড নাইনটিন আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজার।
উহান শহরে শুক্রবার আরও ১,২৯০ জনের মৃত্যুর খবর দেয়া হয়েছে।ফলে চীনে এখন মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৪,৬৩২ জনে ।উহানেই এই মহামারির শুরু এবং অতি সম্প্রতি সেখানে জারি করা কঠোর লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন তাদের পরিসংখ্যান আসতে সময় লেগেছে এবং আগের পরিসংখ্যান সঠিক ছিল না।মৃতের সংখ্যা গোপন করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে চীন। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর ক্ষোভের কারণ এই ভাইরাস মোকাবেলায় পশ্চিমা সরকারগুলোর ভূমিকা নিয়ে চীনের এক নিবন্ধ।
চীনা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এক নিবন্ধে লেখা হয়েছে পশ্চিমের দেশগুলো বৃদ্ধ মানুষদের দেখাশোনার জন্য যে আবাসনগুলো রয়েছে সেখানে বয়স্কদের মৃত্যুর মুখে ফেলে রেখে দিচ্ছে – তাদের সেখানেই মরতে দিচ্ছে। এই নিবন্ধ প্রকাশের পর প্যারিসে চীনা রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এর প্রতিবাদ জানায়। ফ্রান্সে এইসব বৃদ্ধ নিবাস বা কেয়ার হোমে কোভিড ১৯ এ যারা মারা গেছেন তাদের সংখ্যা বিশাল।দেশটিতে মোট মৃতের এক তৃতীয়াংশই কেয়ার হোমের বৃদ্ধ বাসিন্দা। ব্রিটেনেও কেয়ার হোমে বৃদ্ধ বয়সী যারা করোনাভাইরাসে মারা যাচ্ছেন তাদের সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যানে অন্তর্ভূক্ত না করায় সরকারকে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে।
চীন অবশ্য এই বিতর্ককে “ভুল বোঝাবুঝি” বলে নাকচ করে দিয়েছে।সরকারি মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেছেন ফ্রান্স কীভাবে এই মহামারির মোকাবেলা করছে সে বিষয়ে চীন কখনই কোন নেতিবাচক মন্তব্য করেনি। মি.ম্যাক্রোঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল চীন ভাইরাস ঠেকাতে যে কঠোর কর্তৃত্বমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল তা পশ্চিমা দেশগুলোর গণতন্ত্রের দুর্বলতাকে সামনে এনে দিয়েছে কিনা।উত্তরে তিনি বলেছেন মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা আর যে সমাজ ব্যবস্থায় সত্য চাপা দেয়া হয় -এ দুয়ের মধ্যে তুলনা চলে না। “এই তফাতের কথা এবং চীনের বর্তমান অবস্থার কথা মাথায় রেখে বিষয়টা দেখা উচিত।চীন অন্যদের থেকে ভালভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে এটা বলার আগে ভাবা উচিত।” “আমরা জানি না।স্পষ্টতই সেখানে কিছু ঘটেছে যে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।” মি.ম্যাক্রোঁ বলেছেন মহামারি ঠেকাতে গিয়ে মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নিলে পশ্চিমা গণতন্ত্র ঝুঁকিতে পড়বে। চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?
পশ্চিমের দেশগুলোতে এই ভাইরাসে যে হারে মৃত্যু ঘটছে এবং কেয়ার হোম বা বৃদ্ধ নিবাসগুলোকে যেভাবে অবহেলা করা হচ্ছে তা নিয়ে এসব দেশে বহু কর্মকর্তাকে নানাধরনের জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হচ্ছে।আর এসব দেশের জনসংখ্যা চীনের তুলনায় অনেক কম। চীন সেদেশে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা গোপন করেছে পশ্চিমা দেশগুলোর এমন অভিযোগ দেশটি অস্বীকার করেছে।
আমেরিকা আর ব্রিটেন চীনের দেয়া পরিসংখ্যান ও তাদের ব্যাখ্যা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে দাবি তোলায় সবার থেকে এগিয়ে রয়েছে।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডমিনিক রাব বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন এই প্রাদুর্ভাব কীভাবে শুরু হল এবং “কেন তা আরও আগে থামানো গেল না” তা নিয়ে চীনকে “কঠিন প্রশ্নের” মুখোমুখি করতে হবে। তিনি বলেছেন চীন থেকে এই ভাইরাস কীভাবে বাইরে এভাবে ছড়ালো তা “গভীরভাবে অনুসন্ধান” করতে হবে এবং এই সঙ্কটের পর “সব লেনদেন আগের মতই” চালানো যাবে না।
ডোনাল্ড ট্রাম্পও চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। চীনের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

Share.