শনিবার, নভেম্বর ২৩

দুই শিশুকে ধর্ষণের পর পরিবারের ৪ জনকে হত্যা করে ১৭ বছরের কিশোর

0

 ঢাকা অফিস: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় তিন সন্তানসহ এক নারীকে হত্যা করেছে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর। পরিবারটির বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ার পর এমন ঘটনা ঘটিয়েছে সে। এ ঘটনার দায়ে সোমবার (২৭ এপ্রিল) পারভেজ নামে ওই কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে পারভেজের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তমুলক জবানবন্দিতে বেরিয়ে এসেছে চার খুনের রোমহর্ষক বর্ণনা। মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার গ্রামের একটি দোতলা বাড়িতে। গত বৃহস্পতিবার ২৩ এপ্রিল ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলার কক্ষ থেকে একই পরিবারের চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই চারজন হলেন ফাতেমা আক্তার (৪০), তার বড় মেয়ে সাবরিনা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে মোছা. শাওরিন (১২) ও ছোট ছেলে ফাদিল সামদানি (৮)। স্বীকারোক্তমুলক জবানবন্দিতে সে বলেছে, মুঠোফোন চুরি করতে রাতের আঁধারে ওই বাড়িতে ঢুকেছিল। তারপর একে একে কুপিয়েছে বাড়ির চার বাসিন্দাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় ধর্ষণ করেছে দুই কিশোরীকে। এই নির্মমতা থেকে রেহাই পায়নি আট বছরের প্রতিবন্ধী শিশুও। পিবিআই এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিমা সুলতানা জানান, থানা-পুলিশ এবং সিআইডির পাশাপাশি পিবিআইও ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করছিল। ঘটনার পর থেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা ভুক্তভোগীদের বাবা রেজোয়ান হোসেনের সঙ্গে তাঁরা নিয়মিত যোগাযোগ করছিলেন। রেজোয়ানই জানান এই কিশোর তাঁর মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করেছে বিভিন্ন সময়। এ ঘটনায় তাকেই তাঁর সন্দেহ হয়। তাঁর কথার ভিত্তিতেই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পারভেজ (১৭) পুলিশকে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে সে ওই বাড়ির পাশে যায়। এরপর বাড়ির ওয়ালে বের হয়ে থাকা ইটে পাড়া দিয়ে দোতলার ছাদে ওঠে। পরে বেড দিয়ে ছাদে কাপড় শুকানোর রশি কেটে ছাদের একটি গ্রিলের সঙ্গে বাঁধে। পরে ওই রশি বেয়ে দোতলার বাথরুমের ভেন্টিলেটরের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ভেতরে ঢোকে। বাথরুমে রাখা ওয়াশিং মেশিনের ওপর পা রেখে সে নিচে নামে। পরে দুই কিশোরী নূরা ও শাওরিনের কক্ষে যায়। তখনও নূরা জেগে থাকায় ঘাতক খাটের নিচে লুকিয়ে পড়ে। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা লুকিয়ে থাকার পর সবাই ঘুমিয়ে পড়লে সে খাটের নিচ থেকে বের হয়। এসময় সে নিচতলায় গিয়ে গৃহবধূ স্মৃতি ফাতেমার রুমে দরজা খোলার চেষ্টা করে। এসময় ফাতেমা ভেতর থেকে দরজা খুলে বের হলে ঘাতক দরজার পেছনে গিয়ে লুকায়। কিন্তু গৃহবধূ কাউকে দেখতে না পেয়ে পুনরায় রুমে ঢোকার সময় বটি দিয়ে তার মাথা ও ঘাড়ে আঘাত করে ঘাতক। এতে গৃহবধূ ফাতেমা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এই শব্দ পেয়ে নূরা ঘুম থেকে জেগে তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। তখন কিশোরীকেও এলোপাতাড়ি কোপায় সে। এরপর জেগে ওঠে নূরার প্রতিবন্ধী ভাই ফাদিল। সে ঘরের এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছিল। তাকেও কুপিয়ে হত্যা করে। ঠিক তখন শাওরিনের ঘুম ভেঙে গেলে সে চিৎকার করে ওঠে। ঘাতক পারভেজ তাকেও বটি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। এরপর দুই বোনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ধর্ষণ করে। আর ধর্ষণের পর ছুরি দিয়ে সবাইকে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে পারভেজ। ফাতেমা আক্তারের গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, দুটি কানের দুল, একটি কানফুল, একটি নাকফুল এবং দুই বোনের আলমারি খুলে দুটি স্বর্ণের চেইন, একটি আংটি, একটি লাল রঙের ডায়েরি নিয়ে নেয়। আর ফাতেমার ঘর থেকে দুটি মুঠোফোন নিয়ে সে হাতমুখ ধুয়ে ফেলে। এরপর বাড়ির পেছনের গেট খুলে ফজরের আজানের সময় তার বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সূত্র জানায়, ঘাতক বাড়িটিতে পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান করে। গ্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার বাড়ির আলনায় অন্যান্য কাপড়ের সঙ্গে রাখা তার রক্তমাখা গেঞ্জি উদ্ধার করে পিবিআই। আর লুট করা স্বর্ণের গহনা ও দুটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়েছে। পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এই কিশোরের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় হওয়া মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দেয়া হয়েছে। ৯ মাস জেল খাটার পর কিছুদিন আগে সে জামিনে ছাড়া পেয়েছে। গ্রেফতারকৃত পারভেজ স্থানীয় একটি মক্তবে পড়ত। তার বাবা রিকশাচালক। সে দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। উল্লেখ্য, নিহত ফাতেমা আক্তার ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। মালয়েশিয়ায় চাকরি করার সুবাদে সেখানে শ্রীপুরের আবদার গ্রামের বাসিন্দা রেজোয়ান হোসেনের সঙ্গে পরিচয় ও প্রেম হয়। ২২ বছর আগে তাঁরা বিয়ে করেন। ২০১০ সালে এই দম্পতি সন্তানদের নিয়ে দেশে আসেন। এরপর রেজোয়ান মালয়েশিয়ায় তাঁর কাজ অব্যাহত রাখলেও ফাতেমা আর কাজে যাননি।

Share.