ঢাকা অফিস: শেয়ারবাজারে বহু আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়া অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন আর মাত্র একদিন পরেই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিদায় নিচ্ছেন। কে হচ্ছেন খায়রুলের উত্তরসূরী তা নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জনা গেছে, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানের দৌড়ে বেশ কয়েকজন রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আমলা, বিএসইসির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে অবসরে যাওয়া সচিব মনোয়ার আহমেদ, বিএসইসি থেকে সদ্যবিদায় নেয়া কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামী,আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খানের নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। আর এই চারজনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম এবং ইআরডি থেকে অবসরে যাওয়া সচিব মনোয়ার আহমেদ বিএসইসির চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে আলোচনায় থাকাদের বাইরে থেকেও বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান আসতে পারেন। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের ধসের কারণ অনুসন্ধানে খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশে বিএসইসিকে নতুন করে ঢেলে সাজায় সরকার। সেই সুযোগে ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট বিএসইসিতে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক খায়রুল হোসেন। প্রথমবার তিন বছরের জন্য খায়রুল হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়। যা শেষ হওয়ার আগেই পুনঃনিয়োগ পান তিনি। তবে এক্ষেত্রে তিনি চার বছরের জন্য নিয়োগ পান। দ্বিতীয় দফায় তার চার বছরের জন্য নিয়োগ পাওয়ার কারণ ছিল ওই নিয়োগের আগেই কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মেয়াদ তিন বছর থেকে বৃদ্ধি করে চার বছর করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ২০১৪ সালের ১০ এপ্রিলে চার বছরের চুক্তিতে বিএসইসির চেয়ারম্যান করা হয় খায়রুল হোসেনকে। তবে তিনি বিএসইসিতে যোগদান করেন ওই বছরের ১৫ মে। সে হিসাবে দুই দফা বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া খায়রুল হোসেনর সাত বছর পূর্ণ হয় ২০১৮ সালের ১৪ মে। তবে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে খায়রুল হোসেনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আইন লঙ্ঘন করে তাকে আরও দুই বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান করা হয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ সালের ৫ এর ৬ উপধারা অনুযায়ী, বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা শুধু একটি মেয়াদের জন্য পুননিয়োগের যোগ্য হইবেন। খায়রুল হোসেনের এই পুননিয়োগ নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়। এছাড়া একের পর এক দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন দিয়েও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন খায়রুল হোসেন। তার পদত্যাগের দাবিতে মতিঝিলের রাস্তায় নেমে দিনের পর দিন বিক্ষোভ ও মানববন্ধনও করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ ও শেয়ারবাজারের মন্দা অবস্থায় এক পর্যায়ে খায়রুল হোসেন পদত্যাগ করেছেন- এমন গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে। তবে সব আলোচনা-সমালোচনা দূরে ঠেলে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে থেকে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক। অবশ্য আগামী ১৪ মে’র পর খায়রুল হোসেনকে আর বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে রাখা হচ্ছে না- বিভিন্ন সূত্র এটা নিশ্চিত করেছে। খায়রুল হোসেনের পর বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে এখনও পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম এগিয়ে রয়েছেন। বর্তমানে সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা এই অধ্যাপক দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং ও বীমা শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত। তবে ডাকসুর নির্বাচন নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে ডাকসুর আট নেতাসহ ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর অভিযোগে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা আরকেজন ইআরডি থেকে অবসরে যাওয়া সচিব মনোয়ার আহমেদ। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি এই আমলা অবসরে যান। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ইআরডির ভারপ্রাপ্ত সচিব হওয়ার আগে মনোয়ার আহমেদ একই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বিএসইসি থেকে সদ্যবিদায় নেয়া কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামীও তবে শেয়ারবাজারের স্টেকহোল্ডারদের বড় অংশ এবং বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির এই কমিশনারের বিপক্ষে রয়েছেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কঠোর সমালোচনা করায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক প্রভাবশালী স্টেকহোল্ডারদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন। অপরদিকে খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশনে থেকে দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয়ার অভিযোগে বিনিয়োগকারীরা তার বিপক্ষে রয়েছেন। বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ দিনের পর দিন মতিঝিলের রাস্তায় বিক্ষোভ করে বিএসইসি থেকে নিজামীর পদত্যাগও দাবি করেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান হতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সাবেক আরেক কমিশনার আরিফ খানও প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিএসইসি ছাড়েন এই কর্মকর্তা। তবে বিএসইসি ছাড়ার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আইডিএলসি ফাইন্যান্সে যোগ দেন। এ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিভিন্ন আলোচনার জন্ম নেয়। গুঞ্জন ছড়ায় দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের দায় থেকে রক্ষা পেতে বিএসইসি ছাড়েন আরিফ খান। বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে আমরা নতুন মুখ চাই। শেয়ারবাজর ভালো বোঝেন এবং নীতি, নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা, সাহস আছে এমন ব্যক্তিকে আমরা বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই। পুরাতন কেউ বিএসইসিতে ফিরে আসুক এটা আমরা চাই না। বিএসইসি থেকে বিদায় নেয়া কাউকে চেয়ারম্যান করা হলে বিনিয়োগকরীদের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হবে, যা সার্বিক শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে কেমন ব্যক্তিকে চান? গত ফেব্রুয়ারিতে এক অনুষ্ঠানে এমন প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে আমরা অবশ্যই যোগ্য ও স্বচ্ছ ব্যক্তিকে চাই। শেয়ারবাজার সম্পর্কে ধারণা আছে এমন ব্যক্তিকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া উচিত। ডিএসইর এক সদস্য বলেন, শেয়ারবাজার এখন একটি ক্রিটিক্যাল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান কমিশনের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্বল কোম্পানির আইপিও দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। যা শেয়ারবাজারের বড় ক্ষতি করেছে। এ পরিস্থিতিতে একজন স্বচ্ছ ব্যক্তিকে বিএসইসির চেয়ারম্যান নির্বাচন করা উচিত। তবে অবশ্যই শেয়ারবাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে এমন ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান করা উচিত।
শেষ হচ্ছে খায়রুল অধ্যায়, নতুন মুখের অপেক্ষায় বিনিয়োগকারীরা
0
Share.