সৌদিতে করোনায় শতাধিক বাংলাদেশির মৃত্যু

0

ডেস্ক রিপোর্ট: সৌদি আরবে করোনায় মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। দেশটিতে করোনা আক্রান্ত  প্রায় ‘শ খানেক বাংলাদেশি মারা গেছেন! মোট আক্রান্ত সাড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার। অনানুষ্ঠানিক সূত্র বলছে, গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৬ জন বাংলাদেশি। কূটনৈতিক সূত্র মতে, কমিউনিটি মারফত তাৎক্ষনিক মৃত্যুর খবর  চাউর হলেও প্রকৃত ডাটাবেজ বা আনুষ্ঠানিক তথ্য পেতে খানিকটা সময় লাগে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত জেদ্দা কনস্যুলেটের রিপোর্টে কেবল মক্কা, মদীনা আর জেদ্দায় ৬৮ বাংলাদেশি মারা যাওয়ার তথ্য শেয়ার করা হয়েছিল। এর বাইরে ছিল রিয়াদসহ গোটা সৌদি আরব। সেখানে ১৬ বাংলাদেশি মারা যাওয়াসহ মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ৮৪। এক সপ্তাহে তা শতক ছুঁয়েছে।রিপোর্ট বলছে, রোববার একদিনেই সৌদি আরবে ২৭০০ নতুন করোনা কেস ধরা পড়েছে। ওই দিনে মারা গেছেন ১০ জন। রোববার অবধি সৌদিতে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে  ৩১২ জনে। সে হিসাবে প্রায় এক তৃতীয়াংশই বাংলাদেশি। দেশটিতে করোনা ভাইরাসে মোট আক্রান্ত ৫৪ হাজার ৭ শ ৫২ জন। এর মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেছেন প্রায় অর্ধেক, ২৫ হাজার ৭ শ ২২ জন। সুস্থ হয়ে ওঠার তালিকায়ও কয়েক হাজার বাংলাদেশি আছেন। তবে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে থাকা অভিবাসী, বিশেষতঃ বাংলাদেশির সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

জেদ্দায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে: জেদ্দা কনস্যুলেট ৬৮ বাংলাদেশির মৃত্যুর রিপোর্ট ঢাকায় পাঠিয়েছিলো গত সপ্তাহে। চলতি সপ্তাহে সেটি আরও বেড়েছে।  পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা বিষয়ক সেল রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের দেয়া রিপোর্টের বরাতে জানিয়েছে, মদিনায় নতুন ৩ জনসহ মোট মারা গেছেন ৩৭ জন বাংলাদেশি। দেশটির সব অঞ্চলের মধ্যে মদিনায়  সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি মারা গেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মক্কায়, সেখানে এ পর্যন্ত ২৪ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। জেদ্দায়  মারা গেছে ১০ জন। আগের রিপোর্ট মতে, সৌদি আরবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বেশিরভাগই চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা। এর পরেই কক্সবাজারের অবস্থান। তাছাড়া কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, লক্ষ্মীপুর, রবিশাল, ভোলা, নড়াইল, নরসিংদী, বগুড়া, খুলনা, বরগুনা, পাবনা, ফেনী পটুয়াখালি এবং সিলেটের বাসিন্দারাও রয়েছেন। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে সোমবার বলেন, সৌদিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সৌদি সরকার এখন আর নাগরিকত্বের বিভাজনী ভিত্তিক রিপোর্ট প্রকাশ করছে না। তবে, এটা সত্য বাংলাদেশির করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। তার মতে, সৌদি সরকার করোনা ঠেকাতে শুরু থেকেই তৎপর রয়েছে। তবে নানা কারণে বিদেশি বা মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কারদের আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি থাকার কথা স্বীকার করলেও রাষ্ট্রদূত বলেন, অনুমান নির্ভর কোনো পরিসংখ্যান দিতে চাই না। কারণ সৌদি সরকার করোনার ব্যাপারে খুবই সচেতন। নিয়মিত বা অনিয়মিত, আরব কিংবা নন-আরব, দেশি কিংবা বিদেশি সবার প্রতি সমান চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিতে চেষ্টা করছে সৌদি সরকার। শুধু তা-ই নয়, করোনার এই কঠিন সময়ে যাতে কেউ অভুক্ত না থাকে সে দিকেও খেয়াল রয়েছে সরকারের। রাষ্ট্রদূত বলেন, মদিনার গভর্ণরের অফিস থেকে আজও খোঁজ নেয়া হয়েছে, কোথাও কোনো বাংলাদেশি খাদ্যকষ্টে আছে কি-না তা জানাতে বলা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত না বললেও অন্য একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সৌদিতে ৫৪ হাজার করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৩৯ হাজারের মত বিদেশি রয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশি আক্রান্তে সংখ্যা এক পঞ্চমাংশের কাছাকাছি, অর্থাৎ সাড়ে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার হবে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেল বলছে, সৌদি সরকার এখন আর করোনা আক্রান্ত বিদেশিদের নাগরিকত্ব প্রকাশ করছেন না। গত এক সপ্তাহ ধরে কোনো হিসাবই দিচ্ছে না তারা। তবে বাংলাদেশের দুটি মিশন নিজস্ব অনুসন্ধানে যে রিপোর্ট পাঠাচ্ছে তাতে আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ৮ হাজারের কম নয় বলে ধারণা দেয়া হয়েছে। এ-ও বলা হয়েছে এটি প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

Share.