শনিবার, নভেম্বর ২৩

৭২ দিন মুম্বাই বিমানবন্দরে বন্দি ঘানার ফুটবলার

0

স্স্পোর্টস ডেস্ক: একদিন, দুদিন নয়। টানা ৭২ দিন বিমানবন্দরে বন্দি ঘানার ফুটবলার র‌্যান্ডি জুয়ান মুলার। এমনিতে করোনা ভাইরাসে প্রকোপ কমাতে লকডাউনের জেরে রোজই বহু মানুষের দুর্ভোগের কথা জানা যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকদের অবস্থা সব থেকে করুণ। লকডাউনের পর থেকে খাবার নেই, টাকা নেই তাঁদের কাছে। মালিক হাত তুলে নিয়েছে। বাড়ি থেকে কয়েক হাজার কিমি দূরে শহরে কাজ করতে এসে তাঁদের যেন চরম শাস্তি ভোগ করতে হল! তবে ঘানার ফুটবলার র‌্যান্ডি জুয়ান মুলারের ভোগান্তিও কম হয়নি।এই ফুটবলারের করুণ কাহিনির কথা শোনার পর হলিউডে ‘দ্য টার্মিনাল’ সিনেমার গল্প মনে পড়ে যেতে পারে অনেকের। ভারত সফর তিনি হয়তো সারাজীবন মনে রাখবেন মুলার। ২৩ বছর বয়সী এই ফুটবলার মুম্বাই বিমানবন্দরে বন্দি থাকলেন টানা ৭২ দিন। কেরালার ওআরপিসি স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে খেলার জন্য ভারতে এসেছিলেন মুলার। গত বছর নভেম্বর মাসে ছয় মাসের ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিলেন। এরপর ২১ মার্চ তিনি বাড়ি যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে যান। তারপর থেকে সেখানেই বন্দি। গত বুধবার বান্দ্রার একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে। মহারাষ্ট্রের পর্যটন ও পরিবেশ মন্ত্রী আদিত্য ঠাকরে তাঁর দুর্দশার কথা জানতে পেরে তাঁকে উদ্ধার করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুলারের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর হইচই পড়ে যায়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মী ও স্টাফদের সহায়তায় দিন কাটছিল তাঁর। বিমানবন্দরের শৌচালয়ে স্নান, জামা কাপড় ধুয়েছেন তিনি। কোনোদিন সিঙ্গাড়া, কোনোদিন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া ফ্রায়েড রাইস খেয়ে দিন কাটছিল মুলারের। কখনও বাগানে ঘুরতেন। কখনও আবার বই পড়েছেন। এভাবেই ৭২ দিন কাটিয়েছেন তিনি।ঘানার কুমাসিতে বাড়ি মুলারের। তিনি বলেছেন, ‘ছয় মাসের ভিসা ছিল আমার। এক ম্যাচ খেললে দুই থেকে তিন হাজার রুপি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনও ম্যাচ খেলতে পারিনি। এদিকে, এখানে এসে থাকা খাওয়া বাবদ দেড় লাখ রুপি খরচ হয়েছে। হাতে টাকা ছিল না। তাই দেশে ফেরার সিদ্ধা্ন্ত নিই। কিন্তু এরপর লকডাউন শুরু হয়ে যায়। আমাকে বিমানবন্দরে যেতে বলে মুম্বাই পুলিশ। সেখানে অবশ্য আমার জন্য কোনও ব্যবস্থা ছিল না। প্রথমে সিআইএসএফ আমাকে বিমানবন্দরে থাকতে দিতে রাজি ছিল না। কিন্তু আমারও কিছু করার ছিল না। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আমাকে খেতে দিত। কিছু টাকাও দিত। এরপর যাত্রীদের থেকে বই পাই। সেগুলো পড়ে আর বিমানবন্দরে ঘুরে দিন কাটে। নিজেকে বোঝাতে থাকি, এই দুঃসময় একদিন কেটে যাবে। একজন যাত্রী আমাকে ‘বি ইয়োর ওউন থেরাপিস্ট’ বই দেন। ওটা পড়ে কিছুটা অনুপ্রেরণা পাই। হতাশা দূর করার চেষ্টা করি। আমার অবস্থা স্টিভেন স্পিলবার্গের দ্য টার্মিনাল সিনেমার মূল চরিত্র টম হ্যাংকসের মতো হয়ে গিয়েছিল। এরপর একদিন নিজের অবস্থার কথা লিখে টুইট করি। আদিত্য ঠাকরে আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।’

Share.