নিশুতি রাতের ভোটের সরকারের মসনদে থাকতে জনগণের দরকার নেই: রিজভী

0

ঢাকা অফিস: সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, নেতা ও ভিআইপিদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিচ্ছেন। তাদের জন্য দ্রুততার সঙ্গে সিএমএইচ, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, হেলিকপ্টার, আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ সব সুবিধা নিশ্চিত করছেন। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তাতেই মারা যাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের কোনো খবর নিচ্ছেন না। কারণ জাতীয় নিশুতি রাতের নির্বাচনের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মসনদে থাকতে দেশের সাধারণ মানুষের কোনো প্রয়োজন হয় না। ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে শুধুই ভিআইপি লাইভস ম্যাটার। গরিব মানুষের জীবন উপেক্ষিত’-যোগ করেন রিজভী।মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিন ভয়ানক হয়ে উঠছে। সরকারের সীমিত টেস্টের লুকোচুরি করা ফলেও শনাক্তের ৯৮তম দিনে এসে গতকাল আক্রান্তের সংখ্যায় করোনার আঁতুড়ঘর চীনকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। মুখে ‘লকডাউন’ কাগজ-কলমে ‘সাধারণ ছুটি’ আবার কখনও কখনও কথিত ‘রেড জোন’ ইয়েলো জোন’ ‘গ্রিন জোন’ এভাবে সরকারের একেকবার একেক ধরনের কথা পুরো পরিস্থিতিকে আরও ভঙ্গুর ও জটিল করে তুলেছে। অপ্রিয় বাস্তবতা হলো– সরকার নিজেও পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারছে না, পরিস্থিতি মোকাবেলার ব্যাপারে কারও পরামর্শ কিংবা সহায়তাও নিচ্ছে না। কেউ সুপরামর্শ দিলে বা সহযোগিতা করতে চাইলে তাদের কটাক্ষ করা মজ্জাগত হয়ে গেছে ক্ষমতাসীন মন্ত্রী-নেতাদের। দেশের মানুষের জীবন নিয়ে সরকারের এ ধরনের হেয়ালিপূর্ণ আচরণ মেনে নেয়া যায় না।হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সংকট নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় কোনো হাসপাতালেই আইসিইউ বেড খালি নেই, কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতালে করোনার ওয়ার্ড খুললেও আইসিইউ বেড ও চিকিৎসার জন্য গলাকাটা দাম নিচ্ছে। তিন মাসে করোনা উপসর্গ নিয়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে সিংহভাগ মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা পাননি। বেঁচে থাকাবস্থায় নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারেননি তারা করোনা আক্রান্ত কিনা। রিজভী বলেন, প্রতিদিন মৃত্যুর বিভীষিকা হানা দিচ্ছে সর্বত্রই। পরিচিত মানুষের মৃত্যুর খবর শুনে ঘুমোতে যাচ্ছি আবার ঘুম থেকে উঠেও শুনছি অসংখ্য দুঃসংবাদ। কিন্তু সরকারের হিংসা-বিদ্বেষ ও নির্মমতা থেমে নেই। করোনা ভয়ের পাশাপাশি গ্রেফতার, গুম আর মিথ্যা মামলার আতঙ্কে দিন কাটছে দেশবাসীর। সামান্য সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার খড়গ নেমে আসে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা ভুলে গেছে যে, যে কোনো অন্যায়েরই মাসুল দিতে হয়।বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের খরচ বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ করোনাভাইরাস মোকাবেলার খাতে অধিকতর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার স্বার্থে এবং করোনা-উত্তর অর্থনৈতিক মন্দাকে সামনে রেখে সরকারি খরচ হ্রাস করছে। নানা ধরনের সরকারি ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্ট নিজেদের ব্যয় কমিয়ে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের অনির্বাচিত সরকার হাঁটছে উল্টোদিকে। এই করোনাভাইরাসের সংকটের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি অফিসের ব্যয় বাড়িয়েছেন ৯৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের খরচের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। গত বছর ৩ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার পর ব্যাপক সমালোচনা হলেও সরকার এতে কর্ণপাত করেনি। একটি অফিস খরচের জন্য এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ নিয়ে জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক হওয়াটাই স্বাভাবিক।

Share.