ঢাকা অফিস: জাতীয় সংসদে আজ মঙ্গলবার আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদের অধিবেশনে বেলা পৌনে ২টায় বাজেট পাস হয়।এ সময় বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। এবারের বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।বেলা ১১টার দিকে সংসদের অধিবেশন শুরু হলে শুরুতে ২০২০-২১ সালের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জন্য তিন হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা এবং মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের জন্য ২৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর একে একে অন্য মন্ত্রীরা তাদের স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কণ্ঠভোটে সেসব প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সর্বশেষে, নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের মধ্য দিয়ে বাজেট পাস হয়।গত ১০ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। পরদিন ১১ জুন বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন।টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বিতীয় বাজেট এটি। ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামে অর্থমন্ত্রী বাজেট বাজেট বক্তৃতা দেন।১৯৭২ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন। কালের পরিক্রমায় এ বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে এবার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এই ৪৯ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। সেইসাথে নিজস্ব অর্থের ব্যবহারে সক্ষমতাও বেড়েছে।বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এবারের বাজেট অধিবেশন ছিলো অনেক সংক্ষিপ্ত। অনেক কর্মসূচি ও কার্যক্রম কাটছাট করা হয়েছে। সংসদ অধিবেশনে সদস্যদের উপস্থিতিও সীমিত করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই এবারের বাজেট প্রণোয়ন করা হয়েছে, অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় এটি উল্লেখ করেছেন।প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে কেউ কেউ উচ্চাভিলাষি বললেও সরকার এ বাজেটের সফল বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নে আমরা অতীতে কখনো ব্যর্থ হইনি এবং ভবিষ্যতেও ব্যর্থ হবো না। আমরা কখনো হতাশায় ভুগি না। আমরা সবসময় একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাই।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বলছেন বাজেট একটু বেশি আশাবাদি বা উচ্চাভিলাষি। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, সবসময় আমাদের একটা লক্ষ্য থাকতে হবে। আজকে কোভিড-১৯-এর জন্য সবকিছু স্থবির। তবে, আমরা আশাবাদি যে, এ অবস্থা থাকবে না। এর থেকে উত্তরণ ঘটবে। আজকে যদি হঠাৎ সে অবস্থার উত্তরণ ঘটে যায়, তাহলে আগামিতে আমরা কী করব, সেটা চিন্তা করেই এই পদক্ষেপটা আমরা নিয়েছি।’জনগণকে আশ্বস্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আগামীতে দেশের সামনে যে সংকটই আসুক না কেন আওয়ামী লীগ সরকার তা শক্তভাবে মোকাবিলা করবে। কাউকে অনাহারে থাকতে হবে না।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটবে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই আমাদের বাজেট দিতে হয়েছে। যদি করোনা পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারি তবে হয়তো আমরা এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব না। কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের প্রস্তুতি আছে। এ কারণেই উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়েছি।’‘এ বাজেট দিয়েছি কারণ আমরা মানুষের জীবনধারণের মানোন্নয়ন ঘটাতে চাই,’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে চারটি অনুমানের ওপর ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আশা করি, সারা বিশ্বের মতো দেশের অর্থনীতিও ২০২১ সালে ধীরে ধীরে কোভিড-১৯-এর প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি তার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে। তাই, আমরা ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছি।’
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাস হলো আজ
0
Share.