চাকরির নামে ভিয়েতনামে নিয়ে প্রতারণা, দেশে আটক ৩ ‘দালাল’

0

ঢাকা অফিস: চাকরির নামে ভিয়েতনামে নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন্ এলাকা থেকে তিনজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) দাবি করেছে, এই তিনজন দালাল। তাদের কাছ থেকে বেশকিছু পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।আটক তিনজন হলেন- জামাল উদ্দিন অরফে সোহাগ (৩৪), কামাল হোসেন (৩৯) এবং জামাল হোসেন (৩৭)। তিনজনকে রাজধানীর পল্টন এলাকায় মাশ ক্যারিয়ার সার্ভিস ও দি জে কে ওভারসিস লিমিটেডের অফিস থেকে আটক করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ২৫৪টি বাংলাদেশি পাসপোর্ট জব্দ করা হয় বলে জানিয়েছে র‍্যাব।আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক রকিবুল হাসান। তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনাম থেকে  দেশে ফেরত আসা ১১ জন বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব অনুসন্ধান ও তদন্ত করে তিনজনকে আটক করে। গতকাল বুধবার তাদের আটক করা হয়।  এ ছাড়া একইভাবে ভিয়েতনাম গিয়ে আটক হয়েছেন আরো ২৭ জন।’র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আটককৃত কাছ থেকে পাওয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা একাধিকবার ভিয়েতনামে গিয়ে সেখানকার দালালদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে ভিয়েতনামের দালালরা জানান, সেখানে বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ রয়েছে। এরপর বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেখায় যে, সেখানে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার কাজের সুযোগ আছে। সেই প্রলোভনে পা দিয়ে ভিকটিমরা ভিয়েতনামে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ভিয়েতনামে যাওয়ার জন্য এজেন্সিগুলো চার লাখ করে টাকা নেয়। এরপর ভিয়েতনামে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের পাসপোর্ট বানিয়ে ভিয়েতনামের দালালদের কাছে পাঠানো হয়।’এরপর দালালেরা ভিয়েতনাম থেকে অফার লেটার তৈরি করে বাংলাদেশের এজেন্সিগুলোতে পাঠায়। সেই অফার লেটার দেখিয়ে ভিয়েতনাম অ্যাম্বাসি থেকে ভিসা সংগ্রহ করে দালালচক্র। সাধারণত বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ভিয়েতনাম সরকার এক বছরের জন্য ডিএন ভিসা দিয়ে থাকে। সেজন্য প্রত্যেক অভিবাসীকে দুই হাজার মার্কিন ডলার নিয়ে যেতে বাধ্য করে এজেন্সিগুলো।’রকিবুল হাসান বলেন, ‘এভাবে সাধারণ মানুষ ভিয়েতনামে প্রবেশের পর সেখানকার দালারেরা বিমানবন্দর থেকে তাদের রিসিভ করে এবং তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে আটক রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে এদের আটকে রেখে তাদের পরিবার থেকে টাকাও চাওয়া হয়।’তাদের স্থায়ী কাজ না দিয়ে ছোটখাটো কাজ দেওয়া হয়। এই অবস্থায় তাদের দেশে ফিরে আসা সম্ভব হয় না। এভাবে তাদের মানবেতর জীবনযাপন শুরু হয়। একই প্রক্রিয়াতে ভিয়েতনামে যাওয়া নাজমুল হাসান (২৬) অসুস্থ হয়ে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল বিনা চিকিৎসায় মারা যান। নাজমুলের স্বজনরা দি জে কে ওভারসিসেরর সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সহযোগিতা পায়নি। পরে ২৭ এপ্রিল তাকে সেখানে দাফন করা হয়। এই জে কে ওভারসিস ২০১৯ সালের নভেম্বরে ১৪ জন বাংলাদেশিকে ভিয়েতনামে পাঠায় যাদের কারোরই এখনো কাজের সুযোগ মেলেনি।’র‍্যাব অধিনায়ক আরো বলেন, অনুসন্ধানের শুরুতে এই ঘটনার সঙ্গে মাশ ক্যারিয়ার সার্ভিস, জে কে ওভারসিস লিমিটেড, অ্যাডভেন্ট ওভারসিস লিমিটেড, মেসার্স সন্ধানী ওভারসিস লিমিটেড ও আল নোমান হিউম্যান রিসোর্স লিমিটেডসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ভিয়েতনামে অবস্থানরত বাংলাদেশি দালাল আবদুল জব্বার, মোস্তফা, গোলাম আজম সুমন, কল্পনা, আজমীর, মিলন, শোভন, আতিক প্রমুখর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।’

Share.