ডেস্ক রিপোর্ট: অর্থ ও মানবপাচারে সহযোগিতার জন্য কুয়েতের জাতীয় পরিষদের দুই সদস্যকে বড় অঙ্কের অর্থ ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম পাপুল। পাবলিক প্রসিকিউশনের বরাতে সোমবার (১৩ জুলাই) কুয়েতি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এমপি সাদুন হাম্মাদ আল-ওতাইবি ও সালাহ আবদুলরেদা খুরশিদকে মোট ৫ লাখ ৭০ হাজার কুয়েতি দিনার বা ১৫ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ঘুষ দেন পাপুল।ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমস লিখেছে, জাতীয় পরিষদের কাছে দুই এমপির দায়মুক্তির বিধান উঠিয়ে নেওয়ার আবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাবলিক প্রসিকিউশন। এর মধ্যে আর্থিক লেনদেন এবং বাণিজ্যিক কাজে সহযোগিতার সাদুন হাম্মাদকে ২ লাখ কুয়েতি দিনার পাপুল দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে এমপি পাপুলকে গ্রেফতার করে কুয়েতের সিআইডি সদস্যরা। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক তিনি। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন তাকে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।আরবি দৈনিক আল রাইয়ের বরাত দিয়ে আরব টাইমস বলেছে, কুয়েতের দুই এমপি সাদুন হামাদ ও সালাহ খুরশেদের দায়মুক্তি তুলে নিতে জাতীয় পরিষদে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ব্যাপারে তথ্য দিয়েছেন সরকারি কৌঁসুলিরা। তারা বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদে এমপি পাপুল জানিয়েছেন, এমপি সাদুন হামাদ ও সালাহ খুরশেদকে তিনি মোট ৫ লাখ ৭০ হাজার দিনার বা ১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন।সিরিয়ার এক মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে এমপি সাদুন হামাদকে নগদ ও চেকের মাধ্যমে ২ লাখ কুয়েতি দিনার বা ৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন পাপুল।এর মধ্যে হামাদের কুয়েত সিটির দক্ষিণ সুরা এলাকার বাসায় নগদ ৫০ হাজার দিনার বা প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা দেন পাপুল। এছাড়া সিরিয়ার ঐ মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে চেকের মাধ্যমে হামাদের কাছে কয়েক দফায় দেড় লাখ দিনার বা প্রায় ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা পৌঁছে দেন।পাপুল স্বীকার করেছেন, বিনা বাধায় তার প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সম্পন্ন করার জন্য কুয়েতের এই এমপিকে ঘুষ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে এমপি সালাহ খুরশেদকে ৩ লাখ ৭০ হাজার দিনার বা ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন পাপুল। বেশ কয়েক ধাপে এই অর্থ তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে কুয়েতে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার সুযোগ পান তিনি।কুয়েতের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে পাপুলের প্রতিষ্ঠান মারাফিয়া কুয়েতিয়া। ঐ প্রতিষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। খবরে বলা হয়েছে, গোপন তদন্তের মাধ্যমে জানা গেছে, এই কোম্পানির আড়ালে একটি সংঘবদ্ধ চক্র মানব পাচার করে আসছিল। বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনতে জনপ্রতি তারা সাড়ে ৬ লাখ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে।অনেক বাংলাদেশি কুয়েতে আসার পর দেখেন তাদের চুক্তি ভুয়া ছিল এবং তাদের পাপুলের অন্য কোম্পানিতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের দিয়ে দৈনিক বেশি সময় কাজ করালেও অতিরিক্ত মজুরি দেওয়া হয়নি। যারা এর বিরোধিতা করেছে তাদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়া হতো। এই মানব পাচার চালিয়ে যেতে কুয়েতের এমপিসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা মদত দিয়েছেন।
দুই কুয়েতি এমপিকে ১৬ কোটি টাকা ‘ঘুষ দেন’ পাপুল
0
Share.