ডেস্ক রিপোর্ট: দশ কোটি বছর সমুদ্রের তলদেশে ঘুমিয়ে থাকার পর জেগে উঠেছে লক্ষাধিক আণুবীক্ষণিক জীব। এসব জীবের মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্রোটোজোয়া, শৈবাল-ছত্রাক, আর্কিয়া ইত্যাদি। ‘নেচার কমিউনিকেশন’ সায়েন্স জার্নালে মঙ্গলবার এই গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। খবর দ্য ওয়ালের।প্রাগৈতিহাসিক যুগের এই অণুজীবদের খুঁজে পেয়েছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। সমুদ্রের একেবারে তলদেশে যেখানে খাবার, অক্সিজেনের অভাব সেখানে কীভাবে কোটি কোটি বছর ধরে বেঁচে রইল আণুবীক্ষণিক জীবেরা সেটাই আশ্চর্যের ব্যাপার। কেউ মৃত নয়, শুধু সুপ্ত ও নিষ্ক্রিয় হয়ে ছিল সমুদ্রের গভীরে। তুলে আনতেই তাদের ঘুম ভেঙেছে। ফের সজীব হয়ে উঠেছে।‘মাইক্রোবিয়াল লাইফ‘ নিয়ে বড় গবেষণা চলছে জাপানে। ২০১০ সাল থেকেই সমুদ্রের গভীরে আণুবীক্ষণিক জীবদের খোঁজ করছেন বিজ্ঞানীরা। ‘জাপান এজেন্সি ফর মেরিন-আর্থ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ এর সমুদ্রবিজ্ঞানীরা এই আণুবীক্ষণিক জীবদের খোঁজ পেয়েছেন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্রের গভীরে।এই গবেষণায় জাপানের সংস্থার সঙ্গে রয়েছে আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, জাপানের কোচি ইউনিভার্সিটি ও মেরিন ওয়ার্কস।বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রের তলদেশে মাটির সঙ্গে মিশে ছিল এই আণুবীক্ষণিক জীবেরা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৭০০ থেকে ৫৭০০ মিটার গভীরে। জাপান এজেন্সি অব মেরিন আর্থের গবেষক ইউকি মোরোনো বলেছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যেখান থেকে ওই জীবদের খোঁজ মিলেছে সেখানে খাবার, অক্সিজেন বলতে কিছুই নেই। আর আণুবীক্ষণিক জীবরা শক্তিতেই বাঁচে। তাই কীভাবে এত বছর ধরে তারা জীবিত ছিল সেটাই আশ্চর্যের ব্যাপার।গবেষক ইউকি বলছেন, ল্যাবরেটিতে নিয়ে আসতেই সক্রিয় হয়ে ওঠে ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, আর্কিয়ারা। খাবার দেওয়া হলে খেয়ে বিভাজিত হতেও শুরু করে দেয়। গবেষকের বক্তব্য, এই আণুবীক্ষণিক জীবদের সক্রিয়তা এতটুকু নষ্ট হয়নি। শক্তি পেয়েই আবার তারা আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। দশ কোটি বছরের এই সময় যেন কিছুই নয় তাদের কাছে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তারা শুধু সুপ্ত হয়ে ছিল।আণুবীক্ষণিক জীবদের এখন কাচের বাক্সে রাখা হয়েছে। খেতে দেওয়া হয়েছে অ্যামোনিয়া। এক লক্ষেরও বেশি আণুবীক্ষণিক জীবের মধ্যে ১০০০ রকমের ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। আলফাপ্রোটিও ব্যাকটেরিয়া ও গামাপ্রোটিও ব্যাকটেরিয়া গ্রুপের ব্যাকটেরিয়ারা ছাড়াও প্রোটোজোয়া, আর্কিয়া, শৈবালও উদ্ধার হয়েছে সমুদ্রের তলদেশ থেকে।গবেষকরা বলছেন, যবে থেকে এই আণুবীক্ষণিক জীবদের তুলে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তার ৬৮ দিনের মাথায় এদের সংখ্যা প্রায় চারগুণ বেড়ে গেছে। এই জীবদের ডিএনএ-র বিন্যাস করা হচ্ছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের এই আণুবীক্ষণিক জীবদের জিনের গঠন বিন্যাস বার করলে সেই সময়কার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও জীববৈচিত্র্যের আরও বিস্তারিত খোঁজ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।