বিনোদন ডেস্ক: ১৬ তারিখে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ১৮ তারিখেই ‘আশীর্বাদ’ নামে নতুন একটি সিনেমার কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। গণমাধ্যমের কাছে তার দাবি ছিল, সিনেমাটির কাজ তিনি নিজে থেকেই ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে জানান, করোনায় এখনো প্রতিদিন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তার মা খুব চিন্তিত। তিনি এ মাসে মেয়েকে কাজে যেতে দিতে চাচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে অপু নিজেও খুব চিন্তিত। ‘আশীর্বাদ’ সিনেমাটির কাজ যেহেতু এ মাসেই শুরু হচ্ছে, তাই মা এবং সন্তান জয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি সিনেমাটি থেকে সরে দাড়িয়েছেন। অপুর কথায়, কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে সন্তান ও মায়ের কাছেই তো যেতে হবে। বিষয়টি তাদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ‘আশীর্বাদ’ সিনেমাটির কাজ ছেড়ে দিয়েছি।’ তবে ঘটনা অন্য কিছু বলে জানালেন সিনেমাটির প্রযোজক এবং একই সঙ্গে কাহিনিকার-চিত্রনাট্যকার জেনিফার ফেরদৌস। ১৮ আগস্ট রাতে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি জানান, অপু সিনেমাটি ছাড়েননি বরং তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাত্র একদিনের ব্যবধানে কী এমন ঘটল যে, অপুর মতো বহু হিট সিনেমার জনপ্রিয় একজন নায়িকাকে এভাবে বাদ দিয়ে দেয়া হলো?এ প্রসঙ্গে ফেসবুক লাইভে প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌস দাবি করেন, অপু বিশ্বাস অভিনেত্রী হিসেবে অতুলনীয়। তবে তিনি চরম অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। জেনিফার বলেন, ‘সিনেমার চুক্তির সময় অপুকে বলা হয়েছিল সবকিছু গোপন রাখতে। আমার অনুমতি ছাড়া চুক্তি বিষয়ক এবং শুটিংয়ের কোনো ছবি বা ভিডিও যেন ব্যক্তিগত পেজে আপলোড না দেয়া হয়। কারণ এগুলো প্রযোজক সংস্থার আওতাভুক্ত।’
জেনিফার জানান, ‘অপু বিশ্বাস সে কথা রাখেননি। তিনি আমার সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময় নিজস্ব ফটোগ্রাফার নিয়ে গিয়েছিলেন। ছবি তুলেছেন, ভিডিও করেছেন। এসবে আমি বাধা দেইনি তবে বলেছিলাম, আমার প্রযোজনা সংস্থার অনুমতি ছাড়া কোনো ছবি বা ভিডিও পোস্ট না করতে। অপু সেটা অমান্য করে চুক্তির দিনই সেখানকার সব ছবি ও ভিডিও তার ব্যক্তিগত ফ্যানপেজে ও ইউটিউবে আপলোড দিয়েছেন।’ প্রযোজক আরও বলেন, ‘চুক্তির অনুষ্ঠানে আমাদের প্রযোজক সংস্থার তরফ থেকেও একজন ফটোগ্রাফার ছিল। সেখানে যে ছবি তোলা এবং ভিডিও করা হয়েছে, সেগুলো সময়মতো সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেবে প্রযোজনা সংস্থা। অপুকে নিষেধ করা সত্ত্বেও তা তিনি মানেননি। যেখানে আমিই কোনো ছবি বা ভিডিও পোস্ট দেইনি। তাই আমি আমার পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে অপুকে সিনেমা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছি।’জেনিফার বলেন, ‘অপু যেহেতু অনেকদিন পর একটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন, তিনি স্বাভাবিক ভাবেই চাইবেন সেটার প্রচার হোক। তার জন্য তো সাংবাদিকরা নিউজ করবেনই। তাই বলে নিজের প্রমোশনের জন্য তো তিনি সাইনিং অনুষ্ঠানের কোনো ছবি বা ভিডিও প্রযোজনা সংস্থার পারমিশন ছাড়া আপলোড করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে মনে হয়, আমার জায়গা থেকে আমি সঠিক আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিনেমা থেকে বাদ দেয়ার পর অপু বিশ্বাস সাইনিং মানি ফেরত পাঠিয়েছেন। যদিও তার কাছে আমি টাকাটা চাইনি। কারণ, তাকে যেভাবে ফোন করে বাদ দিয়েছি, তাতে টাকাটা চাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। তবে তিনি সিনিয়র শিল্পী হিসেবে বোধহয় নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। যার কারণে সাইনিং মানিটা ফেরত পাঠিয়েছেন। এ জন্য তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’
জেনিফার এও জানান, ‘আমাদের চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকার কোনো অভাব নেই। অনেক ভালো ভালো আর্টিস্ট আছে। ইতোমধ্যে নতুন একজন নায়িকাকে সিলেক্ট করাও হয়ে গেছে। সিনেমার কাজ শুরু করার আগে তার নাম পরিচয় ভিডিওবার্তার মাধ্যমে আপনাদের কাছে প্রকাশ করা হবে। অন্যান্য আর্টিস্টদের নামও খুব শিগগির জানানো হবে। তো সবাই দোয়া করবেন, ভালো থাকবেন।’ প্রসঙ্গত, জেনিফার ফেরদৌস প্রযোজিত ‘আশীর্বাদ’ সিনেমাটি ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে সরকারি অনুদান পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের গল্পের এ সিনেমাটি পরিচালনা করবেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। ১৬ আগস্ট রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন অপু বিশ্বাস। কিন্তু অপেশাদারিত্বের অভিযোগে তাকে সরিয়ে দিল প্রযোজক সংস্থা।১৬ বছরের ক্যারিয়ারে শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন অপু বিশ্বাস। সেগুলোর বেশির ভাগই ব্যবসা সফল। এই নায়িকা শেষ কাজ করেছেন দেবাশীষ বিশ্বাসের পরিচালনায় ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ টু’ সিনেমায়। সেখানে তিনি প্রথমবার জুটি বেঁধেছেন বাপ্পী চৌধুরীর সঙ্গে। এছাড়া কলকাতার ‘শটকার্ট’ নামে একটি সিনেমায়ও তিনি অভিনয় করেছেন। দুটিই রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়।