ডেস্ক রিপোর্ট: পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বোউবাকার কেইতাকে ক্ষমতাচ্যুত করা সামরিক বাহিনীর সেনারা অন্তর্বর্তীকালীন বেসমরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং নতুন নির্বাচনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহী অংশের মুখপাত্র মন্তব্য করেছেন যে, দেশ যেন আরো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির দিকে না যায় সে লক্ষ্যে তারা পদক্ষেপ নিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে মালির সামরিক বাহিনীর একটি অংশের হাতে আটক হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট কেইতা পদত্যাগ করেন। এর আগে তাকে ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বোউবেয়ে সিসেকে আটক করে রাজধানী বামাকোর একটি সামরিক ক্যাম্পে নিয়ে যায় বিদ্রোহী সৈনিকরা, যার নিন্দা জানিয়েছে ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।মালির প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে দেশটির তিনজন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই তিন সেনা কর্মকর্তা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
কর্নেল মালিক দিয়াও: যেই কাতি ক্যাম্পে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বিদ্রোহ শুরু করেছিল, কর্নেল মালিক দিয়াও সেই ক্যাম্পের সহকারী প্রধান। তার সম্পর্কে খুব সামান্য তথ্যই জানা যায়।বুধবার সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহী সদস্যদের পক্ষে যখন কর্নেল-মেজর ইসমাইল ওয়াগ বিবৃতি পাঠ করেন, তখন তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন মালিক দিয়াও।তার সম্পর্কে এক টুইটে উল্লেখ করা হয়, ‘কাতি ক্যাম্পের বিদ্রোহের নেতা হিসেবে মনে করা হচ্ছে কর্নেল দিয়াওকে। বলা হচ্ছে প্রেসিডেন্টকে দুপুর ২টার আগে ক্ষমতা ছাড়তে বলেছিলেন তিনি।’
কর্নেল সাদিও কামারা: কাতি মিলিটারি অ্যাকাডেমির সাবেক পরিচালক ছিলেন কর্নেল কামারা। মালি ট্রিবিউন ওয়েবসাইটের খবর অনুযায়ী ১৯৭০ সালে মালির দক্ষিণাঞ্চলের কোউলিকোরো অঞ্চলের কাতিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কোউলিকোরো মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে গ্র্যাজুয়েট করা কর্নেল কামারা পরবর্তীতে কাতি মিলিটারি অ্যাকাডেমির পরিচালক হন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ায় ট্রেনিং নিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। এই মাসের শুরুতে এক মাসের ছুটিতে তিনি রাজধানী বামাকোতে ফিরে আসেন। ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, কর্নেল কামারা যেখানেই কাজ করেছেন, তার সহকর্মী ও অধীনস্থদের আস্থা ও প্রশংসা অর্জন করেছেন। তাদের কাছে তিনি ন্যায়পরায়ণতা ও দৃঢ়চরিত্রের উদাহরণ ছিলেন।
জেনারেল চেইক ফান্টা ম্যাডি ডেম্বেলে: বামাকোর আলিওঁ ব্লোঁদিন বেয়ে পিস কিপিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক জেনারেল চেইক ফান্টা ম্যাডি। ২০১৮ সালের মে মাসে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি হয় তার। জেনারেল ডেম্বেলে ফ্রান্সের সেইন্ট-সির মিলিটারি অ্যাকাডেমির গ্র্যাজুয়েট। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে একটি ডিগ্রিও রয়েছে তার। বার্লিনের জার্মান ফেডারেল আর্মি ইউনিভার্সিটি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিও রয়েছে তার।
মালির সামরিক অভ্যুত্থান: ২০১৮: দ্বিতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইব্রাহিম বোউবাকার কেইতা। ২০১৯: জাতিগত সহিংসতার ঘটনা তীব্র আকার ধারণ করায় প্রধানমন্ত্রী সোউমেইলো বোউবেয়ে মাইগা ও তার সরকার পদত্যাগ করে। মার্চ ২০২০: সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর মধ্যেই বিরোধী নেতা সোউমালিয়া সিসে অপহৃত হন। ৩০শে এপ্রিল: জালিয়াতির অভিযোগে সাংবিধানিক আদালত সংসদ নির্বাচনের কিছু ফলাফল পরিবর্তন করার রায় দেয়। মে: জনপ্রিয় ইমাম মাহমুদ ডিকোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট প্রেসিডেন্ট কেইতার পদত্যাগের দাবি জানায়। জুন: মালির রাস্তায় বিরোধী জোটের প্রতিবাদ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায় পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনৈতিক জোট (ইকোওয়াস)। ১০ই জুলাই: নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন মারা যায়। ১৮ই অগাস্ট: বিদ্রোহী সেনারা সামরিক অভ্যুত্থান পরিচালনা করে।