ঢাকা অফিস: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, ছয় দফা প্রণয়নটা অনেকে অনেকভাবে বলতে চায়-এর পরামর্শ ওর পরামর্শ। কিন্তু আমি নিজে জানি, এটা সম্পূর্ণ তার নিজের চিন্তার ফসল। বুধবার (২৬ আগস্ট) অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।ঐতিহাসিক ৬ দফা বঙ্গবন্ধুর নিজের চিন্তার ফসল, এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে কয়েকটি আলাদা রাষ্ট্র হবে। কিন্তু সেটা পরিবর্তন করা হয়েছিল। পাকিস্তান হলো এবং আমাদের এই ভূখণ্ডকে তার একটা অঙ্গরাজ্য করা হলো। দুর্ভাগ্য হলো পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে বঞ্চনার শিকার হতে হলো আমাদের অর্থাৎ বাঙালিদের। রাজধানী নিয়ে গেল করাচিতে, যেখানে মরুভূমি। আমাদের মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নিল। বাংলায় কথা বলতে দেবে না। উর্দু শিখতে হবে। এরই প্রতিবাদ শুরু হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।’সে সময়ে আইন বিভাগের ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য একটা কমিটি গঠন হলো এবং সেখান থেকে আন্দোলন শুরু হয়, এ তথ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, আমাদের দেশের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী অধিকার আন্দোলন—এসব আন্দোলন নিয়েই নতুন করে যে সংগ্রাম শুরু হয়, সেই সংগ্রামের পথ বেয়েই কিন্তু আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৫৮ সালে যখন তিনি (বঙ্গবন্ধু) গ্রেপ্তার হন। সে সময় থেকেই তিনি প্রস্তুতি নিলেন কীভাবে এই ভূখণ্ডের মানুষকে স্বাধিকার এনে দেবেন। ’৬২ সালে তার একটা উদ্যোগ ছিল—সমগ্র বাংলাদেশে প্রত্যেকটা এলাকায় নিউক্লিয়াস ফর্ম করে এ দেশের মানুষকে সচেতন করা। এরই একটা পর্যায়ে তিনি আবার গ্রেপ্তার হলেন। ১৯৬৫ সালে যখন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলো, তখন আমরা একেবারেই অরক্ষিত ছিলাম। তখনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিদ্ধান্ত নিলেন এবং ৬ দফা প্রণয়ন করলেন।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সব সময় বসে বসে চিন্তা করতেন, নিজেই লিখতেন এবং হানিফকে দিয়ে এটা টাইপ করাতেন। এখানে শুধু হানিফ জানত। এছাড়া কিন্তু আর কারো জানা ছিল না। কাজেই এটা (৬ দফা) সম্পূর্ণ তার নিজের চিন্তা থেকে করা।’‘তিনি যখন লাহোরে যান, লাহোরে গিয়ে এটা পেশ করার চেষ্টা করেন। সেখানে প্রচণ্ড বাধা আসে। বাধা পাওয়ার পর তিনি ওখানেই একটা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের কাছে এটা তুলে ধরেন। তারপর ওরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে যায়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।শেখ হাসিনা বলেন, ছয় দফা দাবি ঘোষণার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের পরে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা) এই দাবিগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন এবং এর প্রচারণা এগিয়ে নিতে মহান ভূমিকা পালন করেছিলেন।‘বাংলাদেশের জন্য আমার মায়ের অবদানের কথা কল্পনাও করা যায় না। তিনি সবসময় জানতেন যে আমার বাবা কী চান এবং সে সম্পর্কে তিনি খুব সচেতন ছিলেন,’ যোগ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বন্ধ করে দেয়।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে পরাজিত শক্তি দেশে আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং তারা দেশের বিজয়কে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল।‘আমি মনে করি এমন কোনো সুযোগ এখন আর নেই। ইতিহাস তার নিজের পথে ভ্রমণ করে, কেউ তা মুছে ফেলতে পারে না এবং এটি আজ প্রতিষ্ঠিত,’ যোগ করেন তিনি।জাতির পিতার দেখানো পথে অনুসরণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
৬ দফা দাবি ছিল বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব চিন্তার ফসল : প্রধানমন্ত্রী
0
Share.