ডেস্ক রিপোর্ট: রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর মেট্রোপোল হোটেলে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফংহ-র সঙ্গে বৈঠকে করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। জানা গেছে, প্রায় আড়াই ঘণ্টার ওই বৈঠকে সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর পথ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে রাজনাথ বলেছেন, বিশ্বাসের আবহ, আগ্রাসী মনোভাব না নেয়া এবং আন্তর্জাতিক রীতি মেনে মতবিরোধ দূর করার উপরেই পুরো এলাকার শান্তি এবং নিরাপত্তা নির্ভর করছে। খবর আনন্দবাজারের।গত মে মাসে লাদাখের গালওয়ানে ভারতীয় ও চীনা সেনার মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পরে এই প্রথম দুই দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক হলো। এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল আলাদা আলাদাভাবে ফোনে কথা বলেছিলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে। যদিও সেনা পর্যায়ে বৈঠক করেই যাচ্ছে উভয় পক্ষ। সাংহাই কর্পোরেশন (এসসিও) সম্মেলন উপলক্ষে তিন দিনের সফরে রাশিয়া রয়েছেন রাজনাথ। সম্মেলনে উপস্থিত আছেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। তবে সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে রাজনাথের বৈঠকের সম্ভাবনা এর আগে খারিজ করে দিয়েছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু গতকাল রাতে চীনের পক্ষ থেকে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়। সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেয় মস্কো। কারণ কূটনীতিকদের মতে, এশিয়ার দুই শক্তিশালী দেশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক তা রাশিয়ার কাছে কোনও ভাবেই কাম্য নয়। মস্কোর আগ্রহে শেষ পর্য়ন্ত আলোচনায় রাজি হয় দিল্লি। শুক্রবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ফংহ-র সঙ্গে রাজনাথের বৈঠকে প্রতিরক্ষাসচিব অজয় কুমার এবং রাশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত ডি বি ভেঙ্কটেশ বর্মাও উপস্থিত ছিলেন। তবে এই বৈঠকের আগেই চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সামনে রাজনাথ বুঝিয়ে দেন যে, লাদাখে চীনা সেনার আগ্রাসন ভারত ভালোভাবে নেয়নি। এসসিও সম্মেলনে তিনি বলেন, বিশ্বাসের পরিবেশ, অনাগ্রাসন, পরস্পরের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে মতপার্থক্য নিরসনের উপরেই আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিরতা নির্ভর করে। সাউথ ব্লকের মতে, ভারত যে শান্তির পথে হেঁটে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে প্রস্তুত, সেই অবস্থানই স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজনাথ। তাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের রাস্তা খুঁজতে হবে চীনকেও। এদিকে দুই দিনের সফরে লাদাখ গেছেন ভারতের সেনাপ্রধান এম এম নরবণ। সীমান্ত সমস্যা মেটাতে কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে আলোচনার উপরে জোর দেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, ভারত আলোচনার মাধ্যমেই সীমান্ত সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। লাদাখে অবশ্য ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। ভারতীয় সেনা গত শনিবার প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণে একাধিক পাহাড়ের চূড়ো দখল করে নেয়ার পরে চুসুল সেক্টরে উল্লেখজনকভাবে সেনাসদস্য বাড়াতে শুরু করেছে চীন। হ্রদের দক্ষিণে মলডোর কাছে অতিরিক্ত ট্যাঙ্কবাহিনী মোতায়েন করেছে তারা। বেড়ে গেছে সাঁজোয়া গাড়ির আনাগোনা, পদাতিক সেনার সংখ্যা। পাল্টা জবাবে রেজাং লা, রেচিন লা-সহ স্প্যানগুর গ্যাপ এলাকায় স্পর্শকাতর উঁচু স্থানগুলো দখল করে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে ভারতও। যাতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নিজেদের দখলে রাখা সম্ভব হয়। ট্যাঙ্কবাহিনীর অবস্থান বিন্যাসেও পরিবর্তন করা হয়েছে। মিসাইল-যুক্ত টি-৯০ ট্যাঙ্কের পাশাপাশি আনা হয়েছে টি-৭২এম১ ট্যাঙ্ক। যেগুলো লাদাখের মতো ভূপ্রকৃতিতে অনায়াসে চলাফেরায় সক্ষম। বাড়ানো হয়েছে বিমানবাহিনীর গতিবিধিও।
উত্তেজনা চরমে, লাদাখে সেনা বাড়াচ্ছে ভারত ও চীন
0
Share.