ঢাকা অফিস: সদায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা না নিতে আইন ও বিচার বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এমন মামলায় মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্তের শঙ্কায় পুরনো আইন মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। যদিও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন এটি একটি কালো আইন, এর মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি কিংবা সুরক্ষা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলো। ফলে অপরাধ দুর্নীতি আরও বাড়বে। মহামারি করোনার কারণে সামনে চলে আসে স্বাস্থ্যখাত। দীর্ঘদিনের খুড়িয়ে চলা এই খাতের অনিয়ম দুর্নীতিও চলে আসে সামনে। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে জোড়াতালি দিয়ে চলতে থাকা স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিবাজদের মুখোশ। পাহাড়সহ অভিযোগ নিয়ে পদত্যাগ করতে হয় স্বাস্থ্যের মহাপরিচালককেও। সম্প্রতি সাবেক মেজর রাশেদ সিনহাকে হত্যার দায় নিয়ে কাঠগড়ায় এখন টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার। ঠিক এমন সময় সরকারি চাকরিজীবীদের গ্রেপ্তারের আগে অনুমতি নেয়ার নোটিশ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮ এর সাব-সেকশন-১ এর বিধান মতে সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো অপরাধ আমলে গ্রহণ করা যাবে না বলে সরকারি কর্মকর্তাদের সুরক্ষায় এমন আরও কিছু বিধি মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, চাকরির বাইরে গিয়ে কাজ করলে যেকোনো মামলা হতে পারে। যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করা যাবে কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা যখন সরকারি কাজগুলো করছে সেই মামলাগুলো করার ক্ষেত্রে পূর্বানুমতি লাগবে। এসব আইন নতুন নয় বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। রাষ্ট্রের উন্নয়ন যেন বাধাগ্রস্ত না হয় তার জন্যই মনে করিয়ে দেয়া বলেও জানান তিনি। সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান জানান, দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে গিয়ে যদি কোনো কাজ করেন সেটা আমলে নেয়া যাবে না এবং মামলা করা যাবে না। কিন্তু আপনি যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, দুর্নীতি করেন, ফৌজদারি অপরাধ করেন, সেটা অবশ্যই অপরাধ হবে এবং মামলা হবে। সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব আবু আলম মো. শহীদ খানের মতে সরকারি কর্মকর্তাদের এই আইন ব্যক্তিগত অপরাধের সুরক্ষা দেয়ার জন্য নয়। বিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, দুর্নীতিকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তাদের বলে দেয়া হচ্ছে তোমরা দুর্নীতি করো অপরাধ করো, অনিয়ম করো, প্রয়োজনে আইন লঙ্ঘন করো, সরকার তোমাকে সুরক্ষা দেবে, এটা কোনো অবস্থা গ্রহণ যোগ্য হতে পারে না। সরকারের যে শুদ্ধাচার নীতিমালা তার সাথে এই আইন সাংঘর্ষিক এবং আইনের সাথেও। ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের আইন চলতে পারে না। এমন আইন দুর্নীতি আর অপরাধকে উস্কে দেয় বলেও মনে করেন তিনি। আইনটি পুরনো হলেও এটিকে কালো আইন বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি। আইনটি বাতিল করা উচিত বলে মনে করে সংস্থাটি।
সরকারি চাকরিজীবীদের গ্রেপ্তারের আগে অনুমতি দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে
0
Share.