আপনি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে কি না বুঝবেন যেভাবে

0

লাইফস্টাইল ডেস্ক: হার্ট ফেলিওর আর হার্ট অ্যাটাক এক জিনিস নয়। নানা কারণে হৃৎপিণ্ডের পেশি দুর্বল হয়ে গিয়ে পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়, অক্সিজেনের ঘাটতিতে শুরু হয় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা। এটাই হার্ট ফেলিওর। ডাক্তাররা হার্ট ফেলিওরকে অসুখ না বলে, বলেন সিনড্রোম। অন্য দিকে হার্ট অ্যাটাক ব্যাপারটা অন্য রকম। হৃৎপিণ্ডের রক্তবাহী ধমনিতে চর্বির প্রলেপ জমে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে হার্টের পেশি অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকতে শুরু করে। দ্রুত চিকিৎসা না করালে হৃৎপিণ্ডের পেশির কিছু অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত যায়। তবে হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে হার্ট ফেলিওরের একটা সম্পর্ক আছে। এক দিকে যেমন কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ (অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের রক্তবাহী ধমনিতে চর্বি জমে হার্টের রক্ত চলাচল কমে যাওয়া) বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হার্ট ফেলিওরের মতো সমস্যাও। মানুষের গড় আয়ু যোমন বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হার্ট ফেলিওরের ঘটনাও কিন্তু মহামারীর আকার নিচ্ছে। তবে শুরুতে অত্যাধুনিক চিকিৎসার সাহায্য নিয়ে এবং দৈনিক জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন আনলে ভাল থাকা যায়।

হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায় কেন: হার্টের পেশি দুর্বল হয়ে গেলে পাম্প করার ক্ষমতা কমতে শুরু করে। অনেকগুলো কারণ এর জন্য দায়ী। হার্ট অ্যাটাকের পর সঠিক চিকিৎসা না হলে এবং লাইফস্টাইল পালটাতে না পারলে হৃৎপিণ্ডের পেশি দুর্বল হতে শুরু করে। করোনারি আর্টারি ডিজিজ থাকলে হৃৎপিণ্ডের পেশিতে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। হাই ব্লাড প্রেশার থাকলে হার্টকে অনেক বেশি পাম্প করতে হয়। সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ করতে গিয়েও পেশি ক্রমশ ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। হৃৎপিণ্ডের ভালভের সমস্যা থাকলেও হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি বাড়ে। জন্মগত ভাবে হার্টের ভালভের ত্রুটি থাকলে অথবা সংক্রমণের শিকার হলে ভালভ ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন ওষুধের (কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত) পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, মদ্যপান, সংক্রমণ সহ নানা কারণে কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামক অসুখ হলেও হার্ট ফেলিওর হতে পারে। ভাইরাল ইনফেকশন মায়োকার্ডাইটিস হলেও হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি বাড়ে। এই ক্ষেত্রে লেফট সাইডেড হার্ট ফেলিওর হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান ও মদ্যপানেও হার্টের পেশি কমজোরি হয়। স্লিপ অ্যাপনিয়া অর্থাৎ নাক ডাকার অসুখ থাকলেও এই সমস্যার ঝুঁকি থাকে। হৃৎপিন্ডের জন্মগত ত্রুটির কারণে হার্টের চারটি চেম্বারে রক্ত চলাচল বিঘ্নিত হলেও এই অসুখের ঝুঁকি বাড়ে। অ্যারিথমিয়া— অর্থাৎ হার্টের ছন্দ স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি হলেও হার্ট ফেলিওর হতে পারে। অ্যালার্জি, ফুসফুসে রক্তের ডেলা আটকে যাওয়া, থাইরয়েডের অসুখ, হেমোক্রোমাটোসিস ও অ্যামিলয়ডোসিস নামক অসুখের কারনেও হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি বাড়ে। বয়সজনিত কারণে অনেকেই হার্ট ফেলিওরের শিকার হন। তবে অল্প বয়স্করা, যাদের ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশনের মতন রোগ রয়েছে তারাও হার্ট ফেলিওরের শিকার হতে পারেন। সারাবিশ্বে দিনের পর দিন হৃদযন্ত্রঘটিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হাইপারটেনশন, করোনারি হার্ট ডিজিজ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, রিউমেটিক হার্ট ডিজিজ- এই সব অসুবিধা যাদের মধ্যে রয়েছে তারাই হার্ট ফেলিওরের বেশি শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা কাজের প্রেসার, স্ট্রেস প্রভৃতি কারণে রক্তচাপের সমস্যা এবং অনিয়িন্ত্রিত জীবনযাপনও মানুষের হার্ট ফেলিওরের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বয়সজনিত কারণে অনেকেই হার্ট ফেলিওরের শিকার হন। তবে অল্প বয়স্করা, যাদের ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশনের মতন রোগ রয়েছে তারাও হার্ট ফেলিওরের শিকার হতে পারেন। এ ছাড়াও কারও পরিবারে আগে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ইতিহাস থাকলে পরবর্তী প্রজন্ম এই দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে।

হার্ট ফেলিওরের লক্ষণ: হতোদ্যম হয়ে পড়লে কিংবা শুয়ে থাকবার সময়ের নিঃশ্বাসের দুর্বলতা ,রাতে বার বার প্রস্রাব পাওয়াদুর্বলতা এবং অবসাদ, অনিয়মিত অথবা দ্রুত হৃৎস্পন্দন, শরীরচর্চার ক্ষমতার কমে যাওয়া, পা, গোড়ালি এবং পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া (এডেমা), কাশির সঙ্গে কালচে লাল বা সাদা রক্তযুক্ত কফ বেরোনো, পেট ফুলে যাওয়া (অ্যাসিটেস), শরীর তরল ধরে রাখবার ফলে হটাৎ করে ওজন বেড়ে যাওয়া, খাবারে অনীহা এবং গা গোলানো, মনোনিবেশ করতে সমস্যা কিংবা মনঃসংযোগে খামতি, গুরুতর বা আচমকা নিঃশ্বাসের দুর্বলতা,কালচে লাল কাশির সাথে ফেনার মতন শ্লেষ্মা, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ট পাম্পিং-এর কাজ দুর্বল হয়ে পড়লেই হার্ট ফেলিওরের সম্ভাবনা দেখা যায়। নিউ ইয়র্ক হার্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর মত অনুযায়ী হার্ট ফেলিওরকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। স্টেজ ১ এবং স্টেজ ২-কে প্রি-হার্ট ফেলিওর অধ্যায় বলা যায়। যে সব হার্ট ফেলিওর রোগীদের হৃদযন্ত্রঘটিত দুর্বলতা আছে তাঁদের স্টেজ ৩-এ রাখা যায়। আর যারা হার্ট ফেলিওরের প্রবল সম্ভাবনার শিকার তাদের স্টেজ ৪-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জীবনযাত্রার পরিবর্তন, সঠিক চিকিৎসা এবং মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমেই হার্ট ফেলিওরের মতো রোগের হাত থেকে মুক্তি সম্ভব। হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট, এলভিএডি ইমপ্ল্যান্টেশন পদ্ধতির মাধ্যমেও হার্ট ফেলিওরের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরে আসা সম্ভব।

হার্ট ফেলিওরের হাত থেকে বাঁচার উপায়:

হৃদযন্ত্রঘটিত দুর্ঘটনার থেকে বাঁচতে গেলে মানুষের একটা সুন্দর জীবনযাপনের অভ্যাস করা প্রয়োজন। তাই এই নিয়মগুলো মেনে চলা বাধ্যতামূলক:

ধূমপায়ীদের সিগারেট ছেড়ে দেওয়া, ড্রাগ-এর মতো মাদক ত্যাগ করা।

সৃষ্টিশীল বিভিন্ন কাজ নিয়ে মেতে থাকা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা।

নিয়মিত সুষম খাবার খাওয়া যা শরীরকে পুষ্টি যোগাবে।

আর অবশ্যই হার্ট ফেলিওরের লক্ষণ এবং কারণগুলো নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকা।

অতিরিক্ত লবণেই বাড়বে সমস্যা: বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, লবণে থাকা সোডিয়াম হার্ট ফেলিওরের সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর করে তোলে। সোডিয়াম ক্লোরাইড অর্থাৎ লবণ ছাড়া খাবার খাওয়া মুশকিল। কিন্তু লবণের বাড়তি সোডিয়াম হার্ট ফেলিওর বা হাই ব্লাডপ্রেশারের সমস্যাকে উত্তরোত্তর বেড়ে যায়। কেননা, লবণের সোডিয়াম রক্তবাহী ধমনিতে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলস্বরূপ আর্টারিতে বাড়তি চাপ পড়ে। ফলে এক দিকে ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়, অন্য দিকে হৃৎপিণ্ডের পেশি বাড়তি চাপের ফলে আরও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই অন্যান্য নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি লবণ খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোশিয়েশন’-এর গাইড লাইন অনুযায়ী, যাদের প্রেশার ও হার্টের সমস্যা আছে তাঁরা দিনে ২.৩ গ্রামের বেশি লবণ খাবেন না। প্রতিদিন ডায়েটে থাকুক পর্যাপ্ত ফল ও সবজি। হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে সুস্থ থাকুন।

Share.