ডেস্ক রিপোর্ট: ব্রিটিশ হোম অফিসের ঘোষণা করা নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর কর্মসংস্থানের জন্য দুই বছর যুক্তরাজ্যে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ২০১২ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেরিজা মে’র নেয়া সিদ্ধান্তকে পাল্টে দেয়া হচ্ছে। টেরিজা মে নিয়ম করেছিলেন যে, স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর বিদেশি শিক্ষার্থীরা চার মাসের বেশী ব্রিটেনে অবস্থান করতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, নতুন পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের নিজেদের সক্ষমতা বুঝতে এবং যুক্তরাজ্যে নিজেদের পেশা গড়ে নিতে সহায়ক হবে। কিন্তু মাইগ্রেশন ওয়াচ নামে একটি প্রচারণা গোষ্ঠী এই পদক্ষেপকে ‘পশ্চাৎমুখী’ বলে উল্লেখ করেছে। সেসব শিক্ষার্থীরা আগামী বছর থেকে যুক্তরাজ্যে স্নাতক পর্যায়ে কিংবা তার থেকে উঁচু কোন ডিগ্রির জন্য পড়াশুনা শুরু করবেন তারা এই পরিবর্তিত নিয়মের সুযোগ পাবেন। কিন্তু এখানে শর্ত থাকবে তারা যেনতেন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেননা। শুধুমাত্র সেইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাএই সুযোগ পাবেন যাদের ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে অভিবাসন সংক্রান্ত নিয়মকানুন যথাযথভাবে মেনে চলার ইতিহাস রয়েছে। সরকারের এই ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এলো যখন একই দিনে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি জেনেটিক প্রকল্প চালু করা হলো। এই প্রকল্পটি শুরু হচ্ছে ইউকে বায়োব্যাংক নামে একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক দাতব্য সংস্থার অধীনে, যাদের কাছে অন্তত ৫ লাখ মানুষের জেনেটিক তথ্য ও নমুনা রয়েছে। ইউকে বায়োব্যাংক গত কয়েক বছর ধরে ৫ লাখ ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবকের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা এবং তথ্য সংগ্রহ করেছে, যা এখন বিশ্বের সব গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত। রোগ নিয়ন্ত্রণে নতুন ওষুধ আবিষ্কারের জন্য গবেষকরা এই তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করতে পারবেন।
সরকারের ‘বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার ‘গর্বিত ইতিহাস’ রয়েছে ব্রিটেনের। “এখন বিশ্বের বৃহত্তম জেনেটিক গবেষণা প্রকল্পে কাজ করতে পুরো বিশ্ব থেকে বিশেষজ্ঞদের এক করছি আমরা যাতে প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসায় উন্নত পদ্ধতি আবিষ্কার তথা প্রাণ বাঁচানো সহজ হয়,” তিনি বলেন। “বিশ্বের উজ্জ্বল এবং মেধাবীদের জন্য যুক্তরাজ্যে পড়াশুনা আর কাজ করার জন্য সুবিধা উন্মুক্ত না হলে এটি অর্জন করা সম্ভব হবে না।” “আর এ জন্যই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের সক্ষমতা চিহ্নিত করা এবং যুক্তরাজ্যে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ দিতে নতুন রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি পাটেল বলেন, এই সিদ্ধান্ত সরকারের ‘বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি”র প্রকাশ। নতুন প্রস্তাবনার আওতায়, শিক্ষার্থীরা কি ধরণের কাজ বা কতটি কাজ করতে পারবেন তার উপর কোন বিধিনিষেধ থাকবে না। “অভিবাসন নিয়ে সরকারের নতুন কোন পদক্ষেপের প্রমাণ যদি চান, তাহলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের দুই বছর থাকতে দেয়ার এই সিদ্ধান্তই সেই প্রমাণ,” বলেন বিবিসির মার্ক ইস্টন। “যেখানে টেরিজা মে অভিবাসন নীতি নিয়ে একটি বৈরী পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিলো মোট অভিবাসনের পরিমাণ কমিয়ে আনা, সেখানে বরিস জনসন সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে বুদ্ধিদীপ্ত এবং সেরাদেরকে বৈশ্বিক ব্রিটেনে এসে বাস করতে উৎসাহী করছেন।” ইউনিভার্সিটিজ ইউকে’র প্রধান নির্বাহী অ্যালেস্টার জারভিস এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে লাভবান করবে এবং উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাজ্যের সুনাম ফিরিয়ে আনবে। “আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যের জন্য ইতিবাচক সামাজিক প্রভাব বয়ে আনে বলে প্রমাণ রয়েছে। সাথে অর্থনীতিতে যোগ করেছে ২৬ বিলিয়ন পাউন্ড। কিন্তু বেশ দীর্ঘ সময় ধরে, শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা শেষে কাজের সুযোগ না থাকায় যুক্তরাজ্য এসব শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে,” তিনি বলেন। তবে মাইগ্রেশন ওয়াচের চেয়ারম্যান আলপ মেহমেট বলেন, এই সিদ্ধান্ত “অপরিণামদর্শী”। তিনি মনে করেন, এর ফলে স্নাতক ডিগ্রিধারী বিদেশি শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি পরিমাণে থেকে যাবে। “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনই অনেক বেশী বিদেশি শিক্ষার্থীকে আকর্ষণ করছে। তাই নতুন করে শিক্ষা ভিসার মান কমিয়ে এটিকে পরোক্ষভাবে কাজের জন্য ভিসায় পরিণত করার কোন দরকার নেই,” তিনি বলেন। ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডায়ান অ্যাবোট বলেন, লেবার পার্টি বরাবরই বলে আসছে যে, স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার পর কাজের সুযোগ দেয়া উচিত। “এতে করে তারা আমাদের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণায় অবদান রাখবে এবং এর ফলে বিশ্বের মেধাবী এবং সেরাদের আনতে পারবো আমরা।” “এটা দুঃখজনক যে, এর আগে এই পদক্ষেপের বিপরীত পদক্ষেপ নেয়ার সময়ও মন্ত্রীরা তা সমর্থন করেছিলো।”