ঢাকা অফিস: কোভিড পরিস্থিতিতে দেশে ফেরা ৪ ভাগের ৩ ভাগ প্রবাসী শ্রমিকই আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, করোনায় চাকরি হারানোসহ নানা কারণে গত এপ্রিল থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৮২ জন কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে নারী কর্মী প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার। গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরু’র হিসেবে বেকার হওয়া এসব শ্রমিকের একেকজনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে গড়ে পৌনে দুলাখ টাকা। করোনা মহামারির কারণে দেশে ফেরত প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন চলেছে সঞ্চয়ের অর্থ খরচ করে। কিন্তু দীর্ঘায়িত কোভিড পরিস্থিতিতে এখন তাদের জীবন চালাতেই করতে হচ্ছে ধার-দেনা। অনেকে আবার কাজে ফেরার চেষ্টায় চড়া সুদে ঋণ নিতেও দ্বিধা করছেন না। পরিস্থিতি মোকাবেলায়, দেশে ফেরত শ্রমিকদের বৈশ্বিক শ্রমবাজারের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে দ্রুত কাজে ফেরানো উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ অভিবাসী বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, কোভিড পরবর্তী নতুন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তৈরি হবে জনশক্তির চাহিদা। সেটা মাথায় রেখে দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের কাজে ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। সৌদিফেরত গাজীপুরের বাসিন্দা শাহীন জানান, করোনায় বাধ্য হয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে তাকে। এতো দিনের গচ্ছিত সঞ্চয়ও শেষ তার। তাই এখন বাধ্য হয়ে ধার দেনা করে কাজে ফিরতে চান শাহীন। শাহীন বলেন, দেশে ফেরার পর আমাদের অবস্থা রাস্তার যে ভিখারী এদের চেয়ে আমরা অসহায় হয়ে গেছি। আমার বাবা আবারও সুদে টাকা নিয়ে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। দেশে ফেরত অধিকাংশ প্রবাসী শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোভিড পরিস্থিতির কারণে দেশে ফেরার পর নির্ধারিত সময় পার হলেও কাজে ফেরার কোনো আশা দেখছেন না তারা। তারা বলেন, সুদে, ধার-দেনা করে পরিবার আমাদের বিদেশে পাঠায়। সবার একটা আশা আকাঙক্ষা থাকে আমাদের উপর। কিন্তু পূরণ করতে না পারলে সেগুলো ভাল হয় না আমাদের জন্য। কোভিড পরিস্থিতির কারণে দেশে ফেরা প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন ব্যবস্থা সবই ওলট-পালট হয়ে গেছে বলেও জানান তারা। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) পরিচালক মেরিনা সুলতানা বলেন, যেসব দেশে ইতোমধ্যে সুযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলোকে দ্রুত একটা পরিকল্পনার মধ্যে আনতে হবে। দেশে ফেরত শ্রমিকদের ডাটাবেস তৈরি করে একটা স্পেশাল টিম করে এটা মনিটর করতে হবে। আর এই তথ্যগুলো যারা বিদেশে যাবে সেই পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার বলেন, কোভিড পরিস্থিতির পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে শ্রমবাজার তৈরি হয়েছে। সরকারকে এখন ফেরত আসা শ্রমিকদের দক্ষতা অনুযায়ী আলাদা আলাদা ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। এরপর যখন যেখানে যে শ্রমবাজার তৈরি হবে সেখানে সে ধরনের শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে।বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়ারও পরামর্শ তাদের।
ঋণে জর্জড়িত দেশে ফেরা ২ লক্ষাধিক প্রবাসী শ্রমিক
0
Share.