ডেস্ক রিপোর্ট: রুয়ান্ডার একটি গ্রামের এক মা তার ছেলেকে জঙ্গলে পাঠাতে বাধ্য হয়। সেই ছেলেই এখন বেঁচে থাকার জন্য ঘাস ও জঙ্গলের প্রাণী খায়। ২১ বছর বয়সী ওই ছেলে এলি কথা বলতে পারে না। এমনকি তার মায়ের হাতে রান্না করা খাবারও খেতে পারে না। যুক্তরাজ্যের ডেইলি স্টার জানাচ্ছে, এলি কলা এবং জঙ্গলের অন্যান্য ফলমূল, এমনকি ঘাস খায়। এলির মায়ের ভাষায়, তার ছেলে বিশেষ এবং ঈশ্বরের পক্ষ থেকে উপহার। কারণ এর আগে জন্মের সময় তার পাঁচ সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। শেখার সমস্যা নিয়ে জন্ম হয়েছে এলির। সে স্কুলে যায় না। নিজের গ্রামের মানুষদেরও ভয় পায়। অদ্ভূত চলাফেরার জন্য গ্রামের কিছু মানুষ তাকে ‘বানর’ বলে ডাকতো। এলির মা বলেন, সে খাবার পছন্দ করে না। সে কলা খেতে ভালোবাসে। সে কিছু জানে না, কিছু করতেও পারে না। এলির মা বলেন, সে শুধু দৌড়াতে পারে। যখন সে মানুষ দেখে, তখন সে দৌড় দেয়। যেখানেই সে যায়, আমিও তার পিছু পিছু যাই। পুরো সপ্তাহে আমরা ২৩০ কিলোমিটার ঘুরি। যদি আমি তাকে অনুসরণ না করি, তাহলে সে হয়তো আর বাড়ি ফিরবেই না। এলিকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টরি তৈরি করেছে আফ্রিম্যাক্স টিভি। তাকে নিরাপদ রাখতে পুরো গ্রাম তার পিছে ছোটে। ওই ডকুমেন্টরিতে এলির মা বলেন, সে সবসময় পশুর মতো খাস খায়। সে সবসময় পালিয়ে বেড়ায়। এলি নাকি ‘উসাইন বোল্টের মতো’ দ্রুত দৌঁড়াতে পারেন। তিনি জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে তার সময় কাটান। এলি কথা বলতে পারেন না এবং কেবল ওয়েভের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করেন। ছেলেকে ধরার জন্য একটি দড়িও প্রস্তুত করে রেখেছেন এলির মা। ছেলের পেছন পেছন জঙ্গলে জঙ্গলে ছুটেন মা এবং এলিকে তার কাছাকাছি নিয়ে আসতে নিজের দড়িটা ছুরে মারেন। বর্ন ডিফারেন্ট নামে একটি ডকুমেন্টরির তথ্যানুযায়ী, জন্মের সময় এলির মাথার আকৃতি একটি টেনিস বলের সমান ছিল। ডকুমেন্টরির নির্মাতাদের এলির মা বলেন, আমাদের পাঁচ সন্তানের মৃত্যুর পর আমরা ঈশ্বরের কাছে আবেদন করি যেন তিনি আমাদের অন্তত একটি প্রতিবন্ধী সন্তান দেন এবং সে যেন ছোট বয়সেই না মারা যায়। যখন এলির জন্ম হয় তখন আমি জানতাম সে এটা ঈশ্বরের পক্ষ থেকে একটি বার্তা। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশীরা এলিকে আমার ছেলে হিসেবে বিবেচনা করেনি। বরং তারা তাকে একটি বানর মনে করতো এবং তাকে সারাক্ষণ জ্বালাতন করতো। এটা আমাকে খুব কষ্ট দিতো। আমার ছেলে বাইরে থেকে ফিরে আসলে দেখতাম সে মারধরে শিকার হয়েছে। তারা এলির ওপর চিৎকার করতো এবং তাকে বানর বলতো। এটা আমার হৃদয় ভেঙে দিতো। এলির মা আরও বলেন, শুধু শিশুরাই নয়, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষজনও লজ্জাজনকভাবে তাকে জ্বালাতন করতো। তাদের কারণে আমি আমার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না। তারা এলিকে মানুষ নয়, একটি পশু হিসেবে দেখে। একজন প্রতিবেশী বলেন, খোঁজখবর না নিলে সে ঘাস খায়। সবাই জানে সে আলাদা, আমরা এমন কাউকে দেখিনি যে পশুর মতো চারণ করতে পারে এবং অন্যান্য প্রাণীর মতো চারণের ওপর নির্ভরশীল। সে জঙ্গলে বেঁচে থাকতে পারবে।
ঈশ্বরের বার্তায় সন্তানকে জঙ্গলে পাঠান মা, এখন সে ঘাস খায়
0
Share.