ঢাকা অফিস: আগামীকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকালে এই ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে শ্রমিকরা।
আমাদের মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরে সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছে পরিবহন শ্রমিকরা। কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কর্মবিরতি শুরু করায় ভোগন্তিতে পড়েছে মাদারীপুরের বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকাল থেকে মাদারীপুরের বিভিন্ন রুটের স্বল্প পাল্লার ও দূর পাল্লার পরিবহন বন্ধ করেছে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। তবে শ্রমিকদের দাবি স্বেচ্ছায় সকল শ্রমিকরা কর্মবিরতি করছে। শ্রমিকদের দাবি, বিদ্যমান আইনের কারণে শ্রমিকদের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। তাই তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছে। আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতি চলবে। মাদারীপুর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, গলায় ফাঁসির রশি নিয়ে শ্রমিকরা গাড়ি চালাবে না। এই আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত অর্নির্দিষ্টকালের জন্য শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করবে।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, আনুষ্ঠানিক কোনো ধর্মঘট কিংবা কর্মবিরতি নয়, নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইনে জেল-জরিমানার ভয়ে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন বরিশালের পরিবহন শ্রমিকরা। কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টার পর থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ সকল এবং দূরপাল্লার আংশিক রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। আকস্মিক বাস বন্ধের ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। এদিকে, পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা বলছেন, বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল করতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। ভাঙচুর করা হচ্ছে বাস। এছাড়া নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইনে জেল-জরিমানা বেশি থাকায় শ্রমিকরা ভয়ে বাস চলাচল করা থেকে বিরত থাকছেন। এ ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক নেতারা অসহায়। নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইনে কোনো দুর্ঘটনার জন্য দায়ী পরিবহন শ্রমিকদের ৫ লাখ টাকার জরিমানা এবং জেলের বিধান রয়েছে। সড়কের অন্যান্য অপরাধেও অতিরিক্ত জেল জরিমানা ধার্য্য করায় ভয়ে আছেন শ্রমিকরা। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লা রুটের বাস চলাচল করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। মাদারীপুর এবং মোস্তফাপুরে বরিশাল রুটের দুটি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। ঝালকাঠীতে বাস চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছে। এসব কারণে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টার পর বরিশাল নগরীর নতুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার কিছু রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকরা। তারা নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন সংশোধন কিংবা বাতিল না করা পর্যন্ত বাস চালাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এদিকে, আকস্মিক বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। দূর-দূরান্ত থেকে নগরীর নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে এসে নির্ধারিত রুটের বাস না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। তারা মালিক-শ্রমিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে এবং জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন জানান, নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘর্মঘট কিংবা কর্মবিরতি করেননি। বিভিন্ন স্থানে বাধা এবং ভাঙচুরসহ নতুন আইনে জেল-জরিমানার ভয়ে শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। তারা বাস চালানোর জন্য কোনো শ্রমিক খুঁজে পাচ্ছেন না। এ ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিকরা নিরূপায়।
আমাদের পিরোজপুর প্রতিনিধি ইমন জানান, নতুন সড়ক ও পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে পিরোজপুর থেকে সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। পরিবহন শ্রমিক নেতারা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও আইনটি সংশোধন ছাড়াই বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে পিরোজপুরের সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে পিরোজপুর থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় হাজারো যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছে। নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে শ্রমিকরা বাস চালাচ্ছেন না। কোনো কারণে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে নতুন আইনে চালকদের মৃত্যুদণ্ড এবং আহত হলে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আমাদের এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই এবং বাস চালিয়ে আমরা জেলখানায় যেতে চাই না। এ কারণেই নতুন পরিবহন আইন সংস্কারের দাবি করছে শ্রমিকরা। নতুন সড়ক আইনে ফাঁসি ও যাবজ্জীবন দণ্ডের ভয়ে শ্রমিকরা গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছে । এখানে মালিকদের কিছু করার নেই। অন্যদিকে চলাচলের মাধ্যম হিসেবে যাত্রীরা বেছে নিচ্ছে ইজিবাইক,অটোরিক্সা ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। দূরের যাত্রীরা ভিড় করছে বিআরটিসির কাউন্টারগুলোতে। হঠ্যাৎ বাস ধর্মঘট দেওয়ায় যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আমাদের প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তায় মহাসড়ক অবরোধ করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে এ অবরোধ শুরু করেছে শ্রমিকেরা। এতে বিপাকে পড়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু, বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও অফিসগামী কর্মকর্তারা। পরে মাওনা হাইওয়ে থানা-পুলিশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে একটি বাসে করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। শ্রমিকেরা জানায়, নতুন কার্যকর হওয়া সড়ক নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে তাদের এই অবরোধ। যতদিন না পর্যন্ত আইন বাতিল হবে তাদের আন্দোলন চলবে। মাওনা হাইওয়ে থানার এসআই আইয়ুব হোসেন জানান, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে শ্রমিকদের সাথে কথা বলে ছাত্রবাহী একটি বাস ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আরও যদি কোনো ছাত্র-ছাত্রী থাকে তাদেরও পরীক্ষার ব্যবস্থা করানো হবে। শ্রমিকদের সাথে কথা বলে মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার চেস্টা চলছে।