চিনির উৎপাদন খরচ ২০৮, বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়!

0

ঢাকা অফিস: ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের অন্যতম ভারী চিনি শিল্প প্রতিষ্ঠান মোবারকগঞ্জ চিনিকল। ২০১৯ থেকে ২০২০ মাড়াই মৌসুমে লোকসান হয়েছে ৯৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ মৌসুমে ৯৪ কর্ম দিবসে এক লাখ ৩৮ হাজার ৮০৩ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে ৭ হাজার ৬৮ মেট্রিক টন। বছর শেষে চিনির প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ পড়ে ২০৮.৪২ টাকা। আর ২০৮ টাকা উৎপাদন খরচের এ চিনি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬০ টাকা কেজি। যদিও মিল কর্তৃপক্ষ বলছে ব্যাংক ঋণের সুদ বাদ দিয়ে ২০১৯-২০২০ মৌসুমে চিনির উৎপাদন খরচ হয়েছিল ১২৪ টাকা। এর আগের ২০১৮-১৯ মৌসুমে সুদ বাদে উৎপাদন খরচ হয়েছিল ১৩৪ টাকা এবং সুদসহ খরচ হয়েছিল ১৯৪ টাকা।এর আগে ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে মিলটির লোকসান গুনতে হয় ৭৭ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ওই মৌসুমে মিলটি ১ লাখ ৮ হাজার ৪২৩ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে ৫ হাজার ৭৮৫ মেট্রিক টন। ওই বছর প্রতি কুইন্টাল চিনি উৎপাদনে খরচ হয়েছিল ১৯৪১৯.৬৫ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ পড়ে ১৯৪.১৯ টাকা। সে বছর ১৯৪ টাকায় উৎপাদিত চিনি বিক্রি করেছিল ৫৫ টাকায়। এদিকে মিলের রেকর্ড বই বলছে, ২০১৭-২০১৮ মাড়াই মৌসুমে এসে এই উৎপাদন খরচ ছিল ১৮৯.১২ টাকা। ২০০১৬-২০১৭ মৌসুমে তা বেড়ে হয় ১৯৯.৮ টাকা। তার আগের মৌসুম ২০১৫-২০১৬ তে প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন ব্যয় হয়েছিল ১৭৬.৪০ টাকা।উল্লেখিত বছর গুলোতে চিনির কেজি প্রতি বিক্রয় মূল্য ছিল ৫০, ৪৭ ও ৪৫ টাকা। এর আগে ২০১৭-২০১৮ মড়াই মৌসুমে ৭০ কোটি ২৮ লাখ ২২ হাজার টাকা এবং ২০১৬-২০১৭ মৌসুমে লোকসান হয় ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ৩৭ মাড়াই মৌসুমে মিলটির লোকসান হয় প্রায় ৪শ কোটি টাকা। সবশেষ ২০০৫-২০০৬ মাড়াই মৌসুমে লাভ হয় ৫ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এ নিয়ে মিলের ৫৩ মাড়াই মৌসুমে ১৬ মৌসুমে লাভ হয়েছে ৩৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০০৫-২০০৬ মৌসুমে মিলটি ১৩৮ মাড়াই দিবসে এক লাখ ৮১ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ১৩ হাজার ৪৩০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করে। চিনি আহরণের হার ছিল ৭.৪০ ভাগ। ওই বছর মিলের কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছিল ৯৮৩ জন। বর্তমানে মিলে কর্মকর্তা ও শ্রমিক কর্মচারী রয়েছে প্রায় ৯শ জন। এছাড়া আখের জাত উন্নয়ন করা গেলে চিনি আহরণের বাড়বে। ফলে লোকসানের ভাগ কিছু কমে আসবে বলেও মত শ্রমিকদের। অন্যদিকে চিনি উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমিক মজুরী খরচ, আখ ক্রয়, মিলে অপরিষ্কার আখ সরবরাহ, রস ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত দৈনিক আখ মাড়াই, পরিবহন খরচ, কারখানা মেরামত এবং বয়লারের জ্বালানীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক খাতের খরচ মিটিয়ে প্রতি বছরই বাড়ছে চিনি উৎপাদন খরচের এই অংক। সে তুলনায় বাড়েনি চিনির বিক্রয় মূল্য। মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার কবীর বলেন, পুরাতন যন্ত্রপাতি, কৃষক পর্যায়ে আখের মূল্য বৃদ্ধি, জনবল সংকট, শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধি, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উৎপাদন ব্যয়ের সাথে সঙ্গতিহীন মূল্য নির্ধারণের ফলে লোকসান বাড়ছে। সাথে পুঞ্জিভূত মোটা অংকের ব্যাংক ঋণের সুদ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণ।  এদিকে অব্যাহত এই লোকসানের জন্য সরকারের নীতি-নির্ধারণকেও দুষছেন মিলের কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। তবে, চিনিকলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার কবীর সরকারের নীতি-নির্ধারণকে ভুল বলতে রাজি নয়। তার ভাষ্য উৎপাদন খরচ বেশি হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় ও পুষ্টিকর এই খাদ্য পণ্যটি জনসাধারণে মধ্যে সহনীয় রাখতেই সরকার নির্ধারিত মূল্যে চিনি বিক্রি করছেন।

Share.