ঢাকা অফিস: তীব্র শীত ও ঘনকুয়াশার কারণে বাগেরহাট জেলার পান বরজগুলোতে দেখা দিয়েছে নানা রোগ। গেল অক্টোবর মাসের ভারি বর্ষণের পর সৃষ্ট বন্যায় জেলার পান বরজ প্লাবিত হয়েছিল। সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই পান গাছের পাতা হলুদ হয়ে ঝড়ে পরা ও পাতাপচা রোগসহ ছত্রাকের আক্রমণে বিপাকে পড়েছে জেলার পান চাষিরা। এ অবস্থায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ছাত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগের কথা বলা হচ্ছে। তবে কৃষকরা বলছে ঘন কুয়াশার কারণে বরজে ওষুধ ছিটিয়েও কোনও সুফল পাচ্ছেন না তারা। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, এ বছর বাগেরহাট জেলায় ১১০৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৪৩৫ হেক্টর, চিতলমারি উপজেলায় ৩৯ হেক্টর, ফকিরহাট উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর, মোল্লাহাট উপজেলায় ১৪০ হেক্টর, মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ২৫ হেক্টর, শরণখোলা উপজেলায় ১০ হেক্টর, কচুয়া উপজেলায় পাঁচ হেক্টর ও রামপাল উপজেলায় এক হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে।বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের দেওয়ানবাটি গ্রামের মানিক পাল বলেন, সমিতি দিয়ে টাকা ওঠায়ে ১৫ কাঠা জমিতে পানের বরাজ করিছি। কয়েক মাস আগে যে বৃষ্টি হইলো, তাতে আমার বরাজও ডুবে গেইলো। সে সমস্যা যাতি না যাতি কয়েকদিন ধইরে যে ঠান্ডা পরতিছে, তাতে পানের পাতা সব হলুদ হয়ে ঝইড়ে পরতিছে। এতো কুয়াশার কারণে পান গাছের পাতায় কালা কালা দাগ পইরে হলুদ হয়ে যাচ্ছে। এখন আমি কি করবো, সমিতির কিস্তির টাহাই বা দেবো কিরাম করে।’ একই গ্রামের আমিরুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘প্রতি বছরই, শীতের সময় কমবেশি পান গাছে পাতা ঝইড়ে পড়ে। কিন্তু এবার শীত একটু বেশি পরতিছে, সঙ্গে আবার কুয়াশা। আমার বরাজের পানও হলুদ হতি শুরু করিছে সঙ্গে পোকের কারণে গাছের মাঝ থেকে ঢইলে পরতিছে। উপজেলা থেকে একজন কৃষি অফিসার আসিলো, বরাজ সে দেইখে গেছে। ওষুধ দিছে, তা ছিটাইয়ে দিছি, সঙ্গে বরাজের ওপরে নেট জাল দিয়ে দিছি, যাতে ভেতরে কুয়াশা না ঢুকতি পারে। এরপরও কাজ হচ্ছে না।’ কাড়াপাড়া ইউনিয়নের সিংড়াই গ্রামের মমতাজ বেগম বলেন, আমার স্বামী নেই। ছয় ছেলে-মেয়ে নিয়ে অতি কষ্টে আমার সংসার চলে। সমিতি দিয়ে টাকা উঠয়ে বরাজ করিছিলাম। গত কয়েক মাস আগে বৃষ্টিতে আমার বরাজ তলায়ইয়ে যায়। পরে পানি নাইমে গেলি, সার-ওষুধ দিয়ে বরাজ ঠিক করিলাম। কিন্তু কুয়াশায় তো পাতা সব হলুদ হতি শুরু করিছে। কি করবো বুঝতিছি না।’ একই গ্রামের বিল্লাল শেখ বলেন, আমি ১২ কাঠা জমিতে পান বরাজ করিছি। এ বছর বর্ষায় আমার পান বরজের মধ্যে পানি উঠে গিয়ে বরজের ক্ষতি হইছিলো। এখন আবার শীত ও কুয়াশার কারণে গাছ থেকে পান ঝরে পড়ছে। ওষুধ তো দিচ্ছি, কিন্তু যে ঠান্ডা পরতিছে তাতে তো কোনও কাজ হচ্ছে না।’ বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, শীত মৌসুমে কুয়াশার কারণে পান পাতা হলুদ হয়ে ঝড়ে পড়াসহ ছাত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। শীতের তীব্রতা ও কুয়াশার পরিমার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্যাগুলো বাড়তে থাকে। এ সময় পান পাতায় ছত্রাকজনিত কালো দাগও দেখা যায়। তবে এ সমস্যা সমাধানে আমরা কৃষকদের বরাজের ভেতরে কুয়াশা যাতে না ঢুকতে পারে সেজন্য পলিথিন বা নেটজাল দিয়ে ছাউনি দেওয়ার পরাপর্শ দিচ্ছি। এছাড়া বরাজে ছত্রাকের আক্রমণ রুখতে কৃষকদের নিয়মিত ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
শীত ও কুয়াশায় পানের বরজে ছড়িয়ে পড়ছে রোগ
0
Share.