ডেস্ক রিপোর্ট: ভিয়েতনামের এক বিশেষ প্রজাতির মুরগির নাম ‘ডং তাও’ চিকেন বা ড্রাগন চিকেন। এই মুরগি কোন সাধারণ মুরগি নয়। মাংস এবং চেহারা এই দুইয়ের আনকোরা মিশেলে যেকোন মুরগি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ড্রাগন চিকেন। একটি ড্রাগন মুরগিকে প্রস্তুত করতে বছর পার হয়ে যায়। পা ধুয়ে বড় করতে হয় এমন মুরগির জাত আর কয়টাই বা আছে? অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই মোটামত দেখতে মুরগিগুলোর একেকটি দুই হাজার ডলারেরও বেশি মূল্যে বিক্রি হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ভিয়েতনামের হ্যানয়ের নির্দিষ্ট কিছু গ্রামেই ডং তাও মুরগির দেখা মেলে। যারা এই বিশেষ মুরগির ফার্ম করেন তাদের বেশিভাগ পরিবারসূত্রেই এই ফার্ম করেন। এই যেমন- জিয়াং তুয়াং ভু। তিনি পৈতৃক সূত্রেই এই মুরগির ফার্মে কাজ করেন। প্রায় ২০ বছর ধরে এই মুরগিগুলোর দেখভাল করছেন তিনি। জিয়াং বলেন, আমি খুব ছোট বয়স থেকেই এই মুরগি পালনের সঙ্গে যুক্ত। আমি ড্রাগন মুরগির ফার্মে কাজ করতে পেরে নিজেকে অন্যদের চাইতে ভাগ্যবান মনে করি। ভাগ্যবান মনে করার আরেকটা কারণ হলো আমার বাবা এবং মায়ের বংশে অনেক আগে থেকে ডং তাও মুরগির ফার্ম করা হয় এবং এই খাতে তারা অনেক জনপ্রিয়। ফার্মের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ফার্মটাকে আরো বড় করার চেষ্টা করেছি। আগে একটা সময় ছিল যখন ডং তাও মুরগির সংখ্যা ছিল প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার। তবে এই কম সংখ্যক মুরগির ভেতরেও স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় একমাত্র ভিয়েতনাম ছাড়া আর কোথাও এই মুরগি দেখা যেত না। ডং তাও মুরগির নামেই গ্রামটিকে ডং তাও ভিলেজ ডাকা হয়। এই মুরগির বেশিভাগ ফার্ম এই গ্রামেই অবস্থিত। তবে ড্রাগন মুরগির আদি নিবাস কোথায় তা এখনো অজানা। প্রায় ১শ’র ও বেশি বছর ধরে এই অঞ্চলে ড্রাগন মুরগি পাওয়া যায়। মোটা এবং শক্তিশালী পা থাকার কারণে ‘মোরগ লড়াই’ খেলাতে ব্যবহার করা হয় এই বিশেষ মুরগিগুলোকে। তবে মারামারি কাটাকাটির কথা বাদ দিলে এই মুরগিগুলোর বিশেষ ধরনের আরেকটি যোগ্যতা হলো তাদের উপাদেয় মাংস। আগেকার দিনে মারামারির জন্য ব্যবহৃত হলেও এখন বেড়েছে এই মুরগির বিশেষ মাংসের কদর। এর বিশেষ মাংসের জন্য ভিয়েতনামের বিশেষ উৎসবে (যেমন নতুন বছর) খাওয়া হয় ড্রাগন মুরগি। জিয়াং ডং তাও মু্রগির মাংস নিয়ে বলেন, এই মুরগির মাংস অন্যান্য মুরগির মাংসের চেয়ে তুলনামূলক কালচে। এটা অনেকটা গরুর মাংসের মতন দেখতে। ভিয়েতনামের অন্য কোন ধরণের মুরগির মাংসই এমন নয়। জিয়াং বলেন, হাজারো মুরগির ভেতর থেকে আমরা একজোড়া মুরগি বেছে নেই। অনেক যাচাই বাছাইয়ের পর আমাদের কাছে শুধুমাত্র তিন থেকে চারভাগ মুরগি অবশিষ্ট থাকে। বাদবাকি মুরগিগুলো আমরা সাধারণ দামে বিক্রি করে দেই। প্রায় ৫০০ মুরগি থেকে ১৫ টি মুরগি লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়।কেন এই মুরগির দাম এত? প্রশ্নের উত্তরে জিয়াং বলেন, এই মুরগির মূল বৈশিষ্ট্য থাকে এদের পায়ে এবং শরীরে। আরো কিছু বিষয় আছে যা অন্য কোন মুরগির জন্য দরকার হয় না। সেগুলো হলো নিয়মিত তাদের পা ধোয়া হয় এবং আলাদা ডায়েট দেওয়া হয়। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে এদের গায়ে সূর্যের স্নেহ অর্থাৎ রোদ লাগাতে হয়।জিয়াং জানান, সেরা ড্রাগন মুরগি অর্থাৎ এ গ্রেডের মুরগির মাংসল লাল রঙের পা থাকে। পাগুলো অনেক বড় হয় এবং শারীরিকভাবেও এদের নিজস্ব একটি ভঙ্গিমা থাকে। প্রতিযোগিতা বা খাবারের জন্য প্রস্তুত করতে এক মাস ব্যাপী বিশেষ যত্নে রাখা হয় একটি ড্রাগন মুরগিকে। এসময় তাদের দেওয়া হয় বিশেষ প্রোটিন ডায়েট। চা পাতা এবং লবণ দিয়ে এদের পা ধোয়া হয় এসময়। গ্রেডিং এর জন্য শুধু পা নয় সমস্ত শরীরই গুরুত্বপূর্ণ। জিয়াং বলেন, একটা ড্রাগন মুরগি কতটা বিরল তার ওপর নির্ভর করে এর দাম। এমন ডং তাও মুরগি আছে যেগুলো ২ হাজার ডলার বা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। একটি গ্রেড এ ডং তাও মুরগি ৬ থেকে ৭ বছরের বেশি সময় ধরে বাঁচে। সারাবিশ্বেই ডং তাও মুরগির চাহিদা বেড়ে চলেছে। ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তানবুলের একটি এয়ারপোর্টে ৮০২ টি ডং তাও মুরগির ডিম আটক করে পুলিশ। পুলিশ প্রত্যেকটি ডিমের মূল্য ধরে দুই লক্ষ টাকা করে। যাদের কাছে এই বিশেষ মুরগির কদর আছে তারা যেকোন মূল্যেই কিনতে রাজি থাকবেন তা বলাই বাহুল্য।
এক মুরগির দাম ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা!
0
Share.