ঢাকা অফিস: বাংলা ভাষার ওপর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন ২১ ফেব্রুয়ারি। আর এই অর্জনে প্রায় সাত দশক আগে যারা আত্মত্যাগ করেছিলেন, তাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনে ফুল চিরন্তন উপকরণ। দিবসটি উপলক্ষে তাই ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের বাড়তি প্রস্তুতি থাকে প্রতি বছরই। তবে করোনা মহামারির ভিন্ন প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার ফুলের বাজারে বেচাকেনাও অনেক কম। এক সপ্তাহ আগে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে যে দাম ছিল এখন তা অর্ধেকেরও নিচে। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) শাহবাগের এক পাইকারি ফুল বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয় সময় সংবাদের। বিক্রেতা জানান, ১২ তারিখ থেকে দু’দিন দাম ভালো ছিল, প্রতিটি ফুলে গড়ে দুই থেকে চার টাকা করে মুনাফা করেছেন তারা। চাষিরা একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে দাম বাড়িয়েছে, কিন্তু এখন ক্রেতার আনাগোনা তেমন না থাকায় দাম পাচ্ছি না। তিনি বলেন, যে পাইকার এক লাখ টাকার ফুল কিনেছে, তার ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকাই লোকসান। একই সুরে কথা বললেন আরেক বিক্রেতা। তিনি বলেন, বাজারে এখন প্রতিটি রজনীগন্ধার স্টিক দুই থেকে তিন টাকা, গোলাপ এক থেকে দেড় টাকা, জারবেরা চার থেকে ছয় টাকা, গাদার ঝোপা (২০ টা মালার বান্ডিল) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে যে প্রত্যাশা ছিল ব্যবসায়ীদের তা তো পূরণ হয়নি, উল্টো বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে জানান তিনি।তবে বছরের বেশির ভাগ সময় বাড়তি দাম নিয়ে অভিযোগ করা ক্রেতারা এবার সন্তুষ্ট। শাহবাগের পাইকারি বাজারে ফুল কিনতে আসা ক্রেতারা বলছেন, প্রত্যাশার চেয়ে কম দামে ফুল কিনতে পারছেন তারা।এক তরুণী তার বাবার সঙ্গে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে বাসায় ফেরার পথে আবারো বাজারে এসেছেন ফুল কিনতে। তিনি জানান, খুচরা বাজারে কয়েকটি ফুল কিনতে যে দাম দিতে হয়, একই টাকায় তিনি পাইকারি বাজারে ৫০টি গোলাপ, ও জারবেরা কিনেছেন।আরেক ক্রেতা এসেছেন বিয়ে উপলক্ষে ফুল কিনতে। বিয়ের গাড়ি ও বাসর সাজাতে তিনি যে বাজেট রেখেছিলেন তার অর্ধেকেই প্রয়োজনীয় ফুল কিনতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি। রাজধানীর এ ফুলের আড়ত এ প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে তিনদিনে প্রায় ২০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। মূলত ১৮ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি- এই তিন দিনে একুশে ফেব্রুয়ারির ফুল বিক্রি হয় শাহবাগের পাইকারি বাজারে। তবে এবার আগে থেকেই ডিএমপি করোনার কারণে শহীদ মিনারে জনসমাগম সীমিত রাখার আহ্বান জানায়। এতে বিক্রি ১০ কোটিতে নেমেছে বলে জানান, ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বাবুল প্রসাদ। তিনি বলেন, অনেক ফুল অবিক্রিত থেকে গেছে, এসব ফুল প্রতিদিনই ফেলে দিতে হচ্ছে। ফেলতেও খরচ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শাহবাগের পাইকারি বাজারে আসা ফুল সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় বিপুল পরিমাণে নষ্ট হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।এদিকে পাইকারি বাজারে অনেকটা পানির দরে ফুল বেচাকেনা হলেও, খুচরা বাজারে অতটা কমে মিলছে না ফুল ও ফুলের তোড়া। শাহবাগের মোড়েই কয়েকটি দোকানে দেখা যায়, কয়েকটি ফুলের মাথার রিং বিক্রি হচ্ছে একেকটি ১০০ টাকায়। ফুলের তোড়া আকারভেদে ২০০ থেকে ৫০০ ও এক হাজার টাকায়। তবে বেচাকেনা আগের তুলনায় অনেক কম বলে জানান বিক্রেতারা।
রাজধানীতে মাত্র এক টাকায় মিলছে গোলাপ!
0
Share.