ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতে আবার নভেল করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে ভয়ংকরভাবে। দেশটিতে এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যেই উত্তরাখন্ড রাজ্যের হরিদ্বারে কুম্ভমেলায় গেছেন লাখ লাখ মানুষ। সেখানে করোনাবিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আজ বুধবার সকালে জানিয়েছে, গত এক দিনে দেশটিতে এক লাখ ৮৪ হাজার ৩৭২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মহারাষ্ট্র রাজ্যে কার্যত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। দিল্লিসহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন শহরে রাতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি হচ্ছে। ব্যতিক্রম শুধু হরিদ্বার। সেখানে কুম্ভমেলায় স্নান উপলক্ষে সমবেত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব। গঙ্গাস্নানের আগে ও পরে মুখে মাস্ক পরাও সম্ভব নয়। ভারতের সরকারি হিসাবে হরিদ্বারে দুই দিনে এক হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।কিন্তু এরপরও ভিড় কমানোর কোনো চেষ্টা নেই। উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী তিরথ সিং রাওয়াত বলেছেন, মানুষের স্বাস্থ্য নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তাই বলে ধর্মকে অবহেলা করা যাবে না। অথচ, এর আগে দেশটিতে করোনার প্রকোপ যখন এতটা বাড়েনি, তখন দিল্লিসহ বিভিন্ন শহরে দুর্গা পূজার ওপর প্রবল কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। ঈদ পালন করতে হয়েছে বাড়িতে। অধিকাংশ ধর্মীয় উৎসব পালন করা হয়েছে একইভাবে।তাহলে কুম্ভমেলার ক্ষেত্রে কেন অন্য নিয়ম? মহারাষ্ট্র সরকার এরই মধ্যে জানিয়েছে, মেলাফেরতরা সংক্রমণ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, কুম্ভমেলার কারণে করোনা ভয়ংকরভাবে বেড়ে যেতে পারে। এক হিসাবে বলা হচ্ছে, গত সোমবার কুম্ভমেলায় স্নানের জন্য ২৮ লাখ মানুষ হরিদ্বারে পৌঁছেছিলেন। তাদের সামলাতে হিমশিম খেয়েছে প্রশাসন।করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় দিল্লির নিজামুদ্দিনে মুসলিমদের ধর্মীয় সম্মেলনকে (মারকাজ) দায়ী করা হয়েছিল। সে সময় এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় বয়ে গেছিল। কিন্তু, উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী রাওয়াত বলেছেন, কুম্ভমেলার সঙ্গে নিজামুদ্দিনের ঘটনার কোনো তুলনা চলে না। নিজামুদ্দিনে এসেছিলেন মূলত বিদেশিরা। আর কুম্ভমেলায় গেছেন দেশের মানুষ। তিনি আরও বলেন, কুম্ভমেলা হচ্ছে খোলা জায়গায়, গঙ্গার ধারে। নিজামুদ্দিনের মারকাজ হয়েছিল বদ্ধ জায়গায়। আর এখন মানুষজন করোনা নিয়ে অনেক বেশি সচেতন।মুখ্যমন্ত্রী তিরথ সিং রাওয়াত বলেন, ১২ বছরে একবার কুম্ভমেলা হয়। এর সঙ্গে মানুষের ধর্মীয় আবেগ জড়িয়ে থাকে। করোনাবিধি মেনে মেলা করাই সরকারের লক্ষ্য। সেজন্য হরিদ্বারে পা দিলেই করোনা পরীক্ষা হচ্ছে।প্রশ্ন হলো, এ রকম ভিড়ে করোনার বিধিনিষেধ মানা আদৌ কি সম্ভব? লাখ লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা করাও কি সম্ভব? মেষ সংক্রান্তি উপলক্ষে আজ বুধবার আবার ‘শাহি স্নান’ আছে হরিদ্বারে।এদিকে মহারাষ্ট্রে সরাসরি লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি ঠিকই, তবে কার্যত ১ মে পর্যন্ত সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অত্যন্ত জরুরি পরিষেবা ছাড়া আর কিছু খোলা থাকবে না। বাড়ি থেকেই মানুষকে কাজ করতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, স্বেচ্ছায় ‘জনতা কারফিউ’ পালন করতে। গোটা রাজ্যে ১৪৪ ধারা চালু করা হয়েছে।এ ছাড়া মহারাষ্ট্রে ওষুধের আকাল। রাজ্য সরকার অনুরোধ করেছেন, সেনার মাধ্যমে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ওষুধ পাঠাতে। গত ২৪ ঘণ্টায় মহারাষ্ট্রে ৬০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।দিল্লিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৪৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেছেন, তারা যেন সিবিএসই পরীক্ষা বন্ধ রাখে। দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কর্ণাটক, কেরালা, অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ুতে হু হু করে বাড়ছে করোনা।
ভারতে করোনায় আক্রান্তের রেকর্ড, কুম্ভমেলায় লাখো মানুষ
0
Share.