লাইফস্টাইল ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে দিন দিন বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সংখ্যা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠছে যে কোনো কোনো দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মিলছে না বেড, দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের ঘাটতি।
এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে কেবলমাত্র অত্যন্ত সংকটজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রেই হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে যাদের রিপোর্ট পজিটিভ কিন্তু উপসর্গ তেমন নেই, কিংবা হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গ আছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে বাড়িতে থেকে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে বাসায় থেকে পরিবারের সবার থেকে নিজেকে আলাদা রাখার।
করোনার প্রাথমিক লক্ষণসমূহঃ করোনা রোগের লক্ষণগুলি যদি প্রথমদিকে ঠিকভাবে শনাক্ত করা যায় তাহলে রোগীকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসার মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা সম্ভব। করোনা আক্রান্তদের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ: জ্বর জ্বর ভাব বা জ্বর হওয়া, কাশি হওয়া, শরীরে ব্যথা এবং মাথা ব্যথা, শরীর খুব দুর্বল হয়ে যাওয়া বা ক্লান্তি, স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়া, পেট খারাপের লক্ষণ দেখা দেওয়া, গলায় ব্যথা হওয়া এমনকি শ্বাস নিতেও সমস্যা হতে পারে।এমন উপসর্গ দেখা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে করোনা টেস্ট করতে হবে। নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে চিকিৎসকের সঙ্গে। কঠোরভাবে হোম কোয়ারেন্টাইন মানতে হবে। এরমধ্যে করোনা টেস্টের রিপোর্ট যদি পজিটিভ হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাড়িতে করোনা রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম মেনে চলা উচিত
১। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্ততপক্ষে ১৪ দিনের জন্য নিজেকে একটি আলাদা ঘরে আইসোলেট থাকতে হবে। বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের থেকে দূরত্ব মেনে চলুন।
২। যে ঘরে থাকবেন সেই ঘরটি যেন গুমোট ও বদ্ধ না হয়। সম্ভব হলে আলো বাতাস চলাচলের উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখুন।
৩। যিনি করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবা করছেন তিনি মাস্ক, গ্লাভস এবং পিপিই পরে থাকেন। সংক্রমিত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও সর্বদা মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
৪। ওষুধ এবং খাবার গ্রহণের সময় পরিবারের সদস্যদের সংস্পর্শে না আসা।
৫। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির বাসন, তোয়ালে, বিছানা এবং সমস্ত ব্যবহার্য জিনিস পরিবারের লোকজন ধরবে না। কারো সঙ্গে একই খাবার প্লেট শেয়ার করবেন না। ব্যবহার করা বাসন গরম জলে ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করা জরুরি।
৬। সংক্রমিত ব্যক্তিকে সময়মতো খাওয়াতে হবে চিকিৎসক কর্তৃক নির্ধারিত ওষুধ। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
৭। করোনা আক্রান্ত রোগীর সর্বদা আলাদা বাথরুম ব্যবহার করা উচিত। তবে ঘরে যদি একটাই বাথরুম থাকে, তবে রোগীর ব্যবহারের পরে ওয়াশরুমটি ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
৮। সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা কত তা বারবার লক্ষ্য রাখতে হবে। অক্সিজেনের মাত্রা যদি ৯৪-এর নীচে নেমে আসে কিংবা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা আরও বেড়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৯। সংক্রমিত ব্যক্তির পোশাক এবং যিনি সংক্রমিত ব্যক্তির সেবা করছেন তার পোশাক ডেটল বা স্যাভলন জাতীয় জীবাণুনাশক দিয়ে রোজ পরিষ্কার করতে হবে। বাসা বাড়ি ভালো করে বারবার স্যানিটাইজ করা এবং বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের ক্ষেত্রেও করোনার কোনও লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কিনা তা নজর রাখা খুবই জরুরি।
১০। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং হাঁচি বা কাশি পেলে অবশ্যই রুমাল বা টিস্যু পেপার ব্যবহার করা।
১১। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে হাইড্রেট রাখতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করবেন এবং তরল খাবেন। কুসুম গরম পানি পান করুন। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করুন। ধুমপান ও অ্যালকোহল সম্পূর্ণরুপে এড়িয়ে চলুন।
১২। সময়মতো গারগল করুন এবং স্টিম নিন।
খাবার সতর্কতাঃ কোভিড রোগীকে দেওয়া যাবে না অতিরিক্ত মশলাদার বা তেলে ভাজা জাতীয় খাবার। ফ্রেশ এবং সাধারণ খাবার দিতে হবে। লাঞ্চ ও ডিনারে দিতে হবে প্রোটিনযুক্ত খাবার। এছাড়া, টাটকা ফলমূল খাওয়ান। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রোগীর মনোবল দৃঢ় রাখা। তাই ভয় না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে বাসায় থেকেই করোনা মোকাবেলা করুন।