ঢাকা অফিস: ১২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও রাজধানী মগবাজার ওয়ারলেসে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের সঠিক কারণ জানা যায়নি।প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ বলছেন, এসির বিস্ফোরণ ঘটেছে, কেউ বা মার্কেটের জেনারেটরকে দায়ী করছেন। অনেকেই ট্রান্সফরমারের কথা বলছেন।তবে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, শর্মা হাউজ নামে ফুডশপে গ্যাস জমে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে।রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকার একটি তিন তলা ভবনে এ বিস্ফোরণ ঘটে।ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে এক শিশু ও তার মাসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। এরইমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে বিস্ফোরণের সময়ের সিসিটিভির একটি ভিডিওফুটেজ। ভিডিওটি দুর্ঘটনাকবলিত ভবনটির পাশে অবস্থিত আড়ং আউটলেটের।ভিডিওতে দেখা যায়, আউটলেটে প্রবেশের পথ দিয়ে লোকজন আসা-যাওয়া করছেন। হঠাৎই ধেয়ে আসে বিস্ফোরণের হলকা। ভেঙে যায় আউটলেটের কাচ। নেমে আসে অন্ধকার। বিস্ফোরণের পর পরই লোকজন ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। মোবাইল ফোনে কয়েকজনকে যোগাযোগ করতে দেখা যায়।ভিডিওটি দেখুন –
ভবনে জমে থাকা গ্যাসই বিস্ফোরণের মূল কারণ বলে ধারণা করছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম।বিস্ফোরণের পর রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এ মন্তব্য করেন তিনি।তবে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে শর্মা হাউজে দুটি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। এই ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছেন। তারা সরাসরি গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন।কীভাবে এবং কোথা থেকে বিস্ফোরণ হলো তা খতিয়ে দেখতে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ফায়ার সার্ভিসের এক্সপার্টরা রাতেই কাজ শুরু করেছেন।এখন পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুসহ এ ঘটনায় ৫০ জনের ওপর আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢামেকের জরুরি বিভাগেই নেওয়া হয়েছে ৩২ জনকে এবং বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয় ১৭ জনকে। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। এ সময় ফ্লাইওভার এবং নিচের সড়কে যানজটে আটকে থাকা বাসসহ অন্যান্য গাড়িতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। শব্দে ভেঙে যায় যানবাহনের জানালার কাচ।দুর্ঘটনাকবলিত ভবনটির নিচতলায় সিঙ্গার শো-রুম, শর্মা হাউস ও গ্র্যান্ড কনফেকশনারি দোকান রয়েছে। বিস্ফোরণের সময় সিঙ্গার শো-রুমের ভেতর থেকে জেনারেটর উড়ে এসে রাস্তায় বাসে পড়ে। এতে দুটি বাসের কাচসহ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্র্তৃপক্ষ।বিস্ফোরণে মৃতদের মধ্যে ৯ মাসের কন্যাশিশু সুবহানা ও তার মা জান্নাত (২৫) এবং স্বপন, রেডিও ধ্বনির সাবেক কর্মী মুস্তাফিজুর রহমান (২৯), আবুল কাশেম এবং অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তি আছেন।বিস্ফোরণের প্রত্যক্ষদর্শী সুলায়মান চৌধুরী। এর ভয়াবহতার কথা জানাতে সুলায়মান গণমাধ্যমকে বলেন, আচমকা বিকট শব্দে কানে তালা লেগে যায় আমার। সত্যিই আমি কী করব বুঝে উঠতে পারিনি। হুড়াহুড়ি করে নিচে নামার সময় কান বন্ধ হয়ে যায়। আমার মাথা কাজ করছিল না। তবে সেন্স ছিল। নিচে নেমে দেখলাম, অবিরামভাবে উপর থেকে কাচের বড় বড় টুকরো ভেঙে পড়ছে। বড় বড় সব ইট-পাথর ও কাচের টুকরো ডিঙিয়ে কোনোমতে বেরিয়ে আসতে পেরেছি।