বাড়ছে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা

0

ঢাকা অফিস: টাঙ্গাইলে গত ১১ মাসে ৫৭টি হত্যাকান্ড, ৯৬টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। আর এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জেলার সাধারণ মানুষ। সামাজিক, পারিবারিক, প্রেমঘটিত ও জমিজমাসহ বিভিন্ন কারণে জেলার ১৩টি থানায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানায়। এর মধ্যে ৪০টি হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ ৯৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া বাকি ১৭টি হত্যাকান্ডের মামলা তদন্ত করছে পিবিআই ও সিআইডি। এছাড়াও গত ১১ মাসে জেলার ১৩টি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে ১৩৮টি। যার মধ্যে ৯৬টি মামলাই ধর্ষণ সংক্রান্ত। জেলায় সকল অপরাধের মোট মামলা হয়েছে ২৬৩৭টি। আইনশৃংক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটাতে প্রতিনিয়ত সামাজিক সচেতনা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন তারা। জানা যায়, শুধু ধর্ষণের সংখ্যাই যে আশঙ্কার একমাত্র জায়গা, তা কিন্তু নয়। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনাগুলোর ধরণও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের ১১ মার্চ মধুপুর বনে প্রেমিককে বেঁধে রেখে এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করে ৫ বন্ধু। গত ১৭ এপ্রিল গোপালপুরে পাকিস্তানী এক কিশোরী (১৭) দাদার বাড়িতে বেড়াতে এসে চাচাতো ভাইয়ের হাতে অপহরণের পর ধর্ষণের শিকার হয়। গত ২১ জুন ধনবাড়ীতে চিকিৎসা করানোর কথা বলে বাক প্রতিবন্ধী এক বিধবা নারীকে (৩৫) ধর্ষণ করে মিনহাজ উদ্দিন। এ ধরনের নির্মম ঘটনাগুলো মানুষের বিকৃত মানসিকতার উদাহরণ। আরও ভয়ঙ্কর হলো- এই ৯৬টি ধর্ষণ মামলার একটি বড় অংশ শিশু ধর্ষণের ঘটনা। গত ১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল শহরের পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়ায় ১ম শ্রেণীর এক শিশুকে ধর্ষণ করে বাচ্চু মিয়া (৫০) নামের প্রতিবেশী। গত ৯ সেপ্টেম্বর দেলদুয়ারে ৭ম শ্রেণীর স্কুলছাত্রীকে ঘরে ঢুকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে ছানোয়ার হোসেন (১৬)। গত ২৬ সেপ্টেম্বর কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া এলাকায় তৃতীয় শ্রেণীর শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে উঠে। গত ২৬ অক্টোবর বাসাইলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হয়। ধর্ষণ ছাড়াও মনোয়ারা, নববধূ রুমি আক্তার, সেনা সদস্য আজিজুল ইসলাম, সানু মিয়া, রোজিনা বেগম, আইনজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা মিঞা হাসান আলী রেজা, অন্তঃসত্ত্বা মা ও শিশুকে জবাই করে হত্যা করা হয়। এইসব হত্যার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন সময় পরিবার ও স্বজনরা মানববন্ধনসহ আন্দোলন করেছেন। নির্মম এসব হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন স্থানীয়রাও। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, টাঙ্গাইলে হত্যা ও ধর্ষণের মতো অপরাধ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তার প্রধান কারণ আগে হত্যা ও ধর্ষণের যেসব মামলা দায়ের হয়েছে, তার সঠিক তদন্ত ও বিচার না হওয়া। আমাদের সমস্যা হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই মামলার আলামতগুলো নষ্ট করার প্রবণতা থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই মামলার তদন্তের ভার দেয়া হয় নতুন অফিসারদের। দক্ষতার অভাবে অনেক মামলায় চার্জশীট অত্যন্ত দুর্বল হয়। চাজর্শীট যদি দুর্বল হয় সেই মামলা সঠিকভাবে বিচার পাওয়া যাবে না। কিন্তু, কোন মামলা যদি মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয় তাহলে পুলিশ বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে নজরদারি করা হয়, একই সাথে চৌকস তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। আর যদি আলোচিত মামলা না হয় তাহলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অবহেলার শিকার হন ভুক্তভোগীরা। এখানে মিডিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। টাঙ্গাইল জেলা জর্জ কোর্টের পিপি আকবর আলী খান বলেন, মোবাইল, ফেসবুক, ইমোর মতো ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রযুক্তির কারণে অনেক মেয়ে বিশেষ করে ১৩-১৪ বছর বয়সীরাও প্রেমের ফাঁদে পরে তাদের জীবনে বিপদ ডেকে আনছে। এসব ক্ষেত্রে মামলা হচ্ছে অনেক। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আহাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পুলিশ আন্তরিকভাবে এসব মামলাগুলো তদন্ত করে থাকে। খুন এবং ধর্ষণের ঘটনা রোধে যুব সমাজকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। অভিভাবকদের ছেলে মেয়েদের প্রতি দ্বায়িত্বশীল হতে হবে।

Share.