ডেস্ক রিপোর্ট: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে চলা বিক্ষোভে সংহতি প্রকাশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে রাজ্যের গভর্নর ফেরত যাওয়ার পর আচার্যের আসন শুন্য রেখেই শুরু হয় সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা। অনেকেই যোগ দেয় প্রতিবাদী ব্যাচ পরে। ডিগ্রি নেওয়া বর্জন করেন প্রায় ৩০ শিক্ষার্থী। আর ডিগ্রি নিতে উঠে মঞ্চে উঠে নাগরিকত্ব আইন ছিড়ে প্রতিবাদের নজরকাড়া মুখ হয়ে ওঠেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্বর্ণপদক জয়ী শিক্ষার্থী দেবস্মিতা চৌধুরী। কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার লিখেছে, প্রতিবাদের নানা ধরণে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে এবারের সমাবর্তন। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়ায় বুধবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীপ ধনখড়। মঙ্গলবার সমাবর্তনে যোগ দিতে ক্যাম্পাসে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন তিনি। পরে তাকে ছাড়াই আচার্যের আসন শুন্য রেখেই শুরু হয় বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠান। অনেক শিক্ষার্থীই জানিয়েছেন গভর্নর হাজির হলে তার কাছ থেকে ডিগ্রি নিতেন না তারা। ভারতজুড়ে চলা আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ‘নো এনআরসি (জাতীয় নাগরিক তালিকা), নো সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধন আইন)’ লেখা ব্যাচ পরে সমাবর্তনে যোগ দেয়। ডিগ্রি নিতে মঞ্চে ওঠার সময়ও অনেকেই পরে ছিলেন এই ব্যাচ। সমাবর্তনে ডিগ্রি নেওয়া বর্জন করেন প্রায় ৩০ শিক্ষার্থী। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সামনেই বিক্ষোভ দেখান তারা। বিক্ষোভকারীদের পক্ষে সোমাশ্রী চৌধুরী বলেন, সংবিধানবিরোধী আইন মেনে নেওয়া যায় না। জামিয়া, আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলা হয়েছে। এসবের প্রতিবাদেই ডিগ্রি বর্জন করেছেন তারা। তবে ডিগ্রি নিতে মঞ্চে উঠে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে অন্যরকম এক প্রতিবাদ দেখান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতেকাত্তরে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান পাওয়া দেবস্মিতা চৌধুরী। স্বর্ণপদক নিতে মঞ্চে উঠে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিড়ে ফেলেন তিনি। পরে ক্যাম্পাসে তিনি বলেন, ‘দেশ জুড়ে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে। আমার মনে হয়েছে, স্বর্ণপদক নেওয়ার জন্য মঞ্চে ওঠার সুযোগটা প্রতিবাদ জানানোর কাজে লাগানো উচিত’। তার এই প্রতিবাদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন দর্শকসারিতে উপস্থিত তার স্বজনেরাও।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ‘হোক কলরব’ আন্দোলনের সময় সমাবর্তন মঞ্চে ডিগ্রি নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন গীতশ্রী সরকার। এবারের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যাদবপুরের ঐতিহ্য মেনেই প্রতিবাদ জানিয়েছে দেবস্মিতা। সে একা নয় শিক্ষার্থীরা যে যেভাবে পেরেছে সেভাবেই ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ জানিয়েছে’।