ডেস্ক রিপোর্ট: চীনের নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনের পাশাপাশি উৎপাদশীল কার্যক্রমে দিন দিন বাড়ছে ডিজিটাল পণ্যের ব্যবহার।এ ছাড়া বিশ্ববাজারেও ব্যবসার পরিধি বাড়ছে চীনভিত্তিক এসব পণ্য উৎপাদনকারীদের। সব মিলিয়ে প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল অর্থনীতি এখন দেশটির সেবানির্ভর বাণিজ্যের চালকের আসনে।যেমন চীনের নির্মাণ শ্রমিকরা এখন এমন এক হেলমেট পরেন যাতে যুক্ত থাকে একটি চিপ। এটি শ্রমিকের চলাচল শনাক্ত করতে পারে। উচ্চপ্রযুক্তির এই হেলমেট তাদের নিরাপত্তা জোরদারে বাড়তি ভূমিকা রাখছে। এতে তাদের কর্মদক্ষতাও বেড়েছে। এই হেলমেটের চাহিদা চীনের বাইরেও বেড়েছে।কেননা চলতি বছরের জুন পর্যন্ত “বেল্ট অ্যান্ড রোড” উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশগুলোতে অন্তত ২ হাজার ৫০০ প্রকল্পের জন্য চুক্তি করেছে।চীনের উন্নত ডিজিটাল ডিজাইন, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, সেবার ব্যয় সব মিলিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে সেসব দেশের কাছে।চীনের বেইজিংয়ের একটি সফটওয়্যার পার্কের প্রকৌশলীরা বলেন, আমরা ডিজিটাল মডেলেই পরিষ্কারভাবে দেখতে পারি কীভাবে কোনো স্থাপনা তৈরি করা যায়। এমনকি স্প্যানসহ ছোট বড় খুঁটিনাটি সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করা যায়। এতে নির্মাণের মান উন্নত করা সম্ভব হয়। তারা বলেন, এসব সেবার এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে চাহিদা বাড়ছে। এতে কোম্পানিগুলোর বেড়ে ওঠার জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।চলতি বছরের প্রথমার্ধে জার্মানি, ইতালি এবং যুক্তরাজ্যে গলডন কোম্পানির পরিচালন আয় বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ন-হাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় পর্ব এবং মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের সিগনেচার টাওয়ার এ দুই প্রকল্পেই ডিজিটাল সার্ভিস দিয়েছে চীন।গলডনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ান ঝেনজ্যাং বলেন, ডিজিটালাইজেশনের মতো সেবার মাধ্যমে কোন প্রকল্পের ভেতর-বাইরে পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়। আমাদের এখন ৮ হাজারের বেশি জনবল আছে। যদিও তাদের বেশির ভাগই চীনে কাজ করেন তারপরও আমরা বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশকে এই সেবা দিতে পারি। সুতরাং আমরা একটা অঞ্চলের মধ্যেই আবদ্ধ নই।ডিজিটাল অর্থনীতি এখন চীনের মোট অর্থনীতির আকারের এক তৃতিয়াংশের বেশি, যা খুব দ্রুত বাড়ছে। এ ধরনের সেবা ও বাণিজ্যের আকার ২০ শতাংশের বেশি প্রতি বছরে।বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, ২০৪০ সালের মধ্যে ডিজিটাল সেবার অর্থনীতি বিশ্ববাণিজ্যের ৫০ শতাংশ দখলে নেবে।এরিক নামের ফ্রান্সের এক প্রযুক্তিবিষয়ক কর্মকর্তা যিনি বেইজিংয়ের জংউয়ানছন এ কাজ করেন। এই এলাকাটি চীনের সিলিকন ভ্যালি নামে পরিচিত।তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও আমরা ফোন কলে ট্র্যাডিশনাল বিজনেস করতাম। আমাদের তখন পণ্যগুলো দেখতে হতো, ছুঁয়ে দেখতাম। কিন্তু আজকের যুগে ইন্টারনেটের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে, ই-কর্মাস এবং ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির কারণে আমরা একদম আলাদা চিন্তাধারায় পৌঁছেছি। যেখানে মানুষ বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে ব্যবসা করতে পারেন। আমরা পণ্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাতে পারি। এমনকি টাচ করতে বা কমান্ড দিতে পারি। বিশ্বা বাণিজ্যের সেবাখাতের ৫০ শতাংশের বেশি এরই মধ্যে ডিজিটাইজড হয়েছে। বিশেষ করে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ই-কমার্স, দূরদেশ থেকে আউটসোর্সিং এবং এমন অনেক ধরনের সেবাভিত্তিক কাজ, যেগুলোর দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে প্রতিবছরই। গত ২০২০ সালে চীন প্রথমবারের মতো ডিজিটাল সার্ভিস রপ্তানির ওপর ১২ অঙ্কের একটি সংখ্যা প্রকাশ করে। এ ধরনের সেবার বাণিজ্য ও উন্নয়ন তরান্বিত করার উদ্দেশেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। জংউয়ানছন সফটওয়্যার পার্কের জেনারেল ম্যানেজার দেং ইয়ানরং বলেন, বর্তমানে চীনের এ পার্কে বিশ্বখ্যাত ৭০০টির বেশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের হেডকোয়ার্টার এবং গবেষণা কেন্দ্র আছে। আমরা ডিজিটাল অর্থনীতি এবং বাণিজ্যের টুইন ইঞ্জিন তৈরি করছি। ভবিষ্যতে আমরা পাইলট প্রকল্পকে কার্যকরভাবে সম্প্রসারণ করে ডিজিটাল বাণিজ্যের এমন একটি সেবার পদ্ধতি গড়ে তুলব যা ডিজিটাল অর্থনীতি এবং বাণিজ্যকে সমন্বিতভাবে উচ্চমানের উন্নয়নের জন্য চালকের আসনে বসাবে।
আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে চীনের ডিজিটাল সেবা
0
Share.