রবিবার, নভেম্বর ২৪

ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে এবার মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে থানায় জিডি

0

ঢাকা অফিস: নারীর বিরুদ্ধে অবমননাকর বক্তব্যের দায়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে এবার মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান। জিডি নম্বর ৩৩৪, ৬ জানুয়ারি ২০২২। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় এ জিডি করেন তিনি। ধানমন্ডির থানার ওসি ইকরাম আলী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে বিকালে জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে ডা. হাসানের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করে তার ছেলে-মেয়ের জীবন বাঁচানোর আকুতি জানান জাহানারা এহসান। ফোন পেয়ে পুলিশ যায় তার বাসায়। পরে থানায় জিডি করেন তিনি। জিডির বক্তব্য হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো:

‘বিবাদী ডা. মুরাদ হাসান…এর সহিত বিগত ১৯ বছর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। বিবাহিত জীবনে আমাদের সংসারে এক মেয়ে রামিসা ফারিহা রাজকন্যা (১৬) এবং এক ছেলে হাসান আবরার মাহির যুবরাজ (১১)। বিবাদী আমার স্বামী। তিনি বর্তমান সরকারের সংসদ সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি (ডা. মুরাদ) কারণে অকারণে আমাকে এবং সন্তানদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করিয়া আসিতেছে এবং হত্যার হুমকি প্রদান করিয়া আসিতেছে। আজ ০৬/০১/২০২২ তারিখ সময় অনুমান ০২:৪৫ ঘটিকার দিকে পূর্বের ন্যায় আমাকে এবং আমার সন্তানদের গালিগালাজ করে এবং মারধর করার জন্য উদ্যত হইলে আমি ৯৯৯-এ কল করিলে ধানমন্ডি থানা পুলিশ বাসার ঠিকানায় পৌঁছালে বিবাদী বাসা হইতে বাহির হইয়া যায়। আমি এমতাবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় আছি। বিবাদী আমাকে এবং আমার সন্তানদের যে কোনো সময়ে ক্ষতি সাধন করিতে পারে।’ পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিকালে ৯৯৯ এ ফোন করেন মুরাদের স্ত্রী। ফোন ধরেন একজন কনস্টেবল সমমর্যাদার অপারেটর। মুরাদের স্ত্রী তাকে বলেন, ‘আমি ডা. জাহানারা। ধানমন্ডি থেকে বলছি। আমার স্বামী ডা. মুরাদ, এমপি মুরাদ।’ এপাশ থেকে ‘আপনাকে কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি’ জানতে চাইলে মুরাদের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী কয়েকদিন ধরেই আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। কথায় কথায় আমাকে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার আমি। আমাকে বাঁচান। ও বলেছে আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে ও আমার সন্তানদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। আমার ওপর এখন হাত তুলতে চেয়েছিল। আমাকে আপনারা বাঁচান। আমাকে উদ্ধার করুন। প্লিজ পুলিশ পাঠান, এখনি পুলিশ পাঠান।’ ৯৯৯ এর অপারেটর তখন মুরাদের স্ত্রীর কাছে তার বাসার ঠিকানা চান। ঠিকানা দিলে ৯৯৯ থেকে ধানমন্ডি থানার ডিউটি অফিসারকে ফোন করা হয়। ডিউটি অফিসার তখন মুরাদের ধানমন্ডি ২৮ (পুরাতন) নম্বরের বাসায় পুলিশ পাঠায়। এরপর সন্ধ্যায় থানায় যান মুরাদের স্ত্রী। নানা সময়ে রাজনীতির ভেতরে-বাইরের বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কিত বক্তব্য রেখে আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মুরাদ হাসানকে। সবশেষ বিএনপি চেয়ারপারসন ও তার পরিবারের নারী সদস্যদের নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়া নিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এই বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহীর সঙ্গে অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হয় ডা. মুরাদের। এরপরই বেকায়দায় পড়ে যান মুরাদ। এমন কর্মকাণ্ডে চটে যান খোদ প্রধানমন্ত্রী। নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে। এরপরই শুরু হয় দলের অ্যাকশন৷ অব্যাহতি দেয়া হয় মুরাদের জেলা জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য সম্পাদকের পদ থেকে। একে একে উপজেলা, ইউনিয়নের পদ থেকেও মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরইমধ্যে আত্মগোপনে চলে যান এই রাজনীতিক। আত্মগোপনে থাকাবস্থায় জমা দেন পদত্যাগপত্র। গৃহীত হওয়ায় মন্ত্রীপরিষদের তালিকা থেকে বাদ পড়েন ডা. মুরাদ। পরে হঠাৎ করেই খবর শোনা যায় দেশ ছাড়ছেন মুরাদ। যাচ্ছেন কানাডা। কিন্তু সেখানেও ভাগ্য সহায় হয়নি তার। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তাদের জেরার মুখে আর দেশটিতে ঢোকার সুযোগ পাননি সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। পরে চলে যান দুবাই। সেখানেও ব্যর্থ হওয়ার পর আর উপায় না পেয়ে মুরাদ হাসান গত ১২ ডিসেম্বর দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পর ডা. মুরাদ এখন কোথায় আছেন, সেই তথ্য নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তিনি এখন কোথায় আছেন, তা কেউ জানে না। তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

Share.