ডেস্ক রিপোর্ট: রাশিয়ার আক্রমণে ক্রমাগত কোণঠাসা হতে থাকা ইউক্রেনের আকাশে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণার বিষয়টি এবার সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো। এর আগে একই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে মার্কিন সরকার। আমেরিক ও ন্যাটো বলছে, নো ফ্লাই জোন কার্যকর করতে গেলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে পারে। শনিবার বার্তা সংস্থা বিবিসি ও রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শুক্রবার রাতে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদরদপ্তরে এই জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ সাংবাদিকদের বলেন, দুঃখের সঙ্গে হলেও এই সামরিক জোট সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ইউক্রেনের আকাশে নো-ফ্লাই জোন করার পদক্ষেপ তারা নেবে না। ন্যাটোর এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি এ পর্যন্ত কয়েকবার তার দেশের আকাশসীমায় নো ফ্লাই জোট ঘোষণা করার জন্য আমেরিকা ও ন্যাটোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তার এ আহ্বানকে সর্বশেষ প্রত্যাখ্যান করল ন্যাটে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেছেন, ইউক্রেন হেরে গেলে ইউরোপ হেরে যাবে। নো-ফ্লাই জোন হলো সামরিক শক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আকাশের একটি এলাকা যেখানে নির্দিষ্ট বিমান ওড়ার অনুমতি নিষিদ্ধ করা হয়। যুদ্ধের সময়, নো-ফ্লাই জোন আরোপ করা হয় যাতে শত্রুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এই অঞ্চলে। ইউক্রেনের আকাশে নো-ফ্লাই জোন কার্যকর করতে গেলে রাশিয়ার বিমান বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে হবে ন্যাটো ও আমেরিকাকে। যার, ফলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি বেড়ে যাবে বহুগুনে। এ বিষয়ে পশ্চিমাদের সতর্ক করেছেন রাশিয়া। এদিকে ন্যাটোর বৈঠক শেষে স্টোলটেনবার্গ বলেন, দীর্ঘমেয়াদে রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তন এলেও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি বজায় থাকবে। এসময় নতুন নতুন দেশকে ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে স্টোলটেনবার্গ বলেন, আমরা রাশিয়ার প্রতিবেশি ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে আমাদের সবগুলো বৈঠকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এসব বৈঠকে আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড ও কার্যসূচি সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করব। স্টোলটেনবার্গ এমন সময় ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দিলেন যখন এ ইস্যুতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান চলছে। রাশিয়া শুরু থেকে পূর্বদিকে ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণকামিতার প্রচণ্ড বিরোধিতা করে এসেছে। সুইডেন ১৮১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত কোনো যুদ্ধে জড়ায়নি এবং দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে বলা হয়েছে, সুইডেন কোনো সামরিক জোটে জড়াবে না।ন্যাটোর মহাসচিব শুক্রবারের ব্রাসেলস বৈঠক শুরু হওয়ার আগে বলেছিলেন, ন্যাটো ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো পক্ষ নয় এবং আমরা সরাসরি রাশিয়ার মুখোমুখি হতে চাই না। ন্যাটোর এই বৈঠকের মধ্যেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউরোপীয় দেশগুলোর জনগণকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে উজ্জিবিত করে তুলতে এক ভাষণে বলেছেন, রাশিয়ার হাতে ইউক্রেনের পতন হলে গোটা ইউরোপের পতন হবে। শুক্রবার রাতে জুম প্ল্যাটফর্মে দেওয়া ভাষণটি ইউরোপের বিভিন্ন শহরের জায়ান্ট স্ক্রিনে একযোগে প্রচারিত হয়। ইউরোপীয় জনগণকে উদ্দীপ্ত করার চেষ্টায় তিনি বলেন, আমরা যদি এ যুদ্ধে জয়লাভ করি তবে তা হবে গণতান্ত্রিক বিশ্বের জন্য একটি সার্বজনীন বিজয়। আর এতে আমাদের পতন হলে ইউরোপের কোনা দেশ বাঁচত পারবে না। এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেন বিজয়ী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। শুক্রবার বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্লিঙ্কেন বলেন, আমি নিশ্চিত যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেন বিজয়ী হবে। তবে সে বিজয় কবে আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে একথা হলফ করে বলছি যে, চলমান রুশ অভিযানে ইউক্রেনের পরাজয় এখন আর অবশ্যম্ভাবী নয়। ইউক্রেনে রুশ অভিযানে নবম দিন চলছে আজ। অভিযানে ইউক্রেনের বেশি কয়েকটি শহর ও বন্দর দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী।
ইউক্রেনে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণায় এবার ন্যাটোর অস্বীকৃতি, ক্ষুব্ধ জেলেনস্কি
0
Share.