মূল্যবৃদ্ধিতে রড-সিমেন্টের ব্যবসা নেমেছে অর্ধেকে!

0

ঢাকা অফিস: আবুল কাশেম ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী আজাদ পাটোয়ারী। রাজধানীর শাহজাদপুরে সিমেন্টের ব্যবসা করেন। গত মাসে ব্যবসা ভালো চললেও এ মাসের শুরু থেকেই ব্যবসা অনেক মন্দা যাচ্ছে। বর্তমানে তার ব্যবসা অধেৃকে নেমে গেছে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতির কারণে চাহিদা ও সরবরাহ সমস্যার প্রভাবে রড-সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উৎপাদকরা। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দিন সাতেকে প্রতি টন রডে দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। আর প্রতি বস্তা সিমেন্টে ৪০-৪৫ টাকা বেড়েছে। আবুল কাশেম বলেন, এই মাসের শুরু থেকে ব্যবসায় একরকম ধস নেমেছে বলা যায়। সিমেন্টের দাম প্রতি বস্তায় গত সপ্তাহের চেয়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বেড়েছে। এতে করে তার অনেক ক্রেতা নির্মাণকাজ স্থগিত রেখেছেন। ফলে দোকানে বিক্রি কমে গেছে। দুই সপ্তাহ আগেও আবুল কাশেম দৈনিক সিমেন্ট বিক্রি করতেন ৮০০ থেকে ১ হাজার বস্তা। এখন বিক্রি নেমে এসেছে ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ বস্তায়। দ্রুত দাম কমানোর আহ্বান জানান তিনি। রামপুরার জামান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মনসুর আলী। দীর্ঘদিন ধরে সফলতার সঙ্গে রড-সিমেন্টের ব্যবসা করে আসছেন তিনি। তার গলায়ও শোনা যায় হতাশার সুর। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১ টন রডের দাম বেড়েছে ১৫ হাজার টাকা। এতে বিক্রি কমে গেছে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। ফলে আমাদের অনেকটা লোকসানের মধ্যে থাকতে হচ্ছে।’ দিন দিন রডের উর্ধ্বগতির লাগাম টেনে না ধরলে এ ব্যবসায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। রড-সিমেন্ট কিনতে আসা বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের বক্তব্য, হঠাৎ করে রড-সিমেন্টের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। যারা ইতোমধ্যে বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন, তাদের অনেকেই আপাতত দাম না কমা পর্যন্ত কাজ স্থগিত রাখবেন বলে জানান। আবার অনেকে বাধ্য হয়ে এসেছেন মালামাল কিনতে, কেননা তাদের কাজ এমন পর্যায়ে যে এখনই সেটি করে নিতে হবে। তাদের দাবি, অবিলম্বে রড-সিমেন্টের দাম না কমলে তাদের বাজেট ঘাটতির কারণে কাজ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়বে। অনেকের কাজও বন্ধ রাখতে হবে। রড-সিমেন্ট উৎপাদকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা মহামারি কমে আসায় অনেকে বাড়ি বা অবকাঠামো নির্মাণে হাত দিয়েছেন। ফলে হঠাৎ বিপুল চাহিদা তৈরি হওয়ায় উৎপাদন সরবরাহে ঘাটতি পড়ছে। বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি আলমগীর কবির ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মহামারি করোনা পরবর্তীতে পশ্চিমা দেশগুলোতে পুরোদমে অবকাঠামো উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়েছে। অপর দিকে এশিয়া অঞ্চলেও নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু কোভিডকালে সিমেন্টের কাঁচামাল চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন হয়নি। ফলে চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে একটি বড় ধরনের গ্যাপ তৈরি হয়েছে।’ আলমগীর কবির, ‘বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় এখন দেশে দাম বাড়ছে। দেশে প্রস্তুত সিমেন্টের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে দ্বৈত কর সমন্বয় করা উচিত।’ আমদানি পর্যায়ে নির্ধারিত শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২৫০ টাকা নির্ধারণ করার পরামর্শ দিয়ে আলমগীর কবির আরো বলেন, ‘নির্মাণ খাতের অন্যতম উপকরণটির কারণে যাতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য করভার কমাতে হবে। দাম সহনীয় পর্যায়ে রেখে বিক্রি বাড়ানো গেলে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব হবে।’ দেশের সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৩৭টি সিমেন্ট কারখানা রয়েছে। গত ৬ বছরে সিমেন্ট বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০১৬ সালে। ২০১৫ সালের তুলনায় সে বছর ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। এরপর ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সিমেন্ট বিক্রি বেড়েছিল প্রায় ১৬ শতাংশ। সে বছর দেশে ৩ কোটি ১৩ লাখ টন সিমেন্ট বিক্রি হয়। অর্থাৎ ১ বছরে বাড়তি ৪৩ লাখ টন সিমেন্ট বিক্রি হয়। ২০২০ সাল বাদ দিলে বছরে গড়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে এই খাতে।

Share.