বাংলাদেশ থেকে চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের হালিশহরে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত প্রতিবেশিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তার নাম আলমগীর মিয়া। গত ১৩ই মার্চ দুপুরে ওই হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যান তিনি। র্যাব জানিয়েছে, ধর্ষক আলমগীর এর আগেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছেন। অপরাধ করে তিনি আত্মগোপনে চলে যেতেন। এই ঘটনার পরেও আলমগীর স্ত্রীকে নিয়ে মানিকগঞ্জে এসে আত্মগোপন করেন। বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। কমান্ডার আল মঈন বলেন, গত ১৩ মার্চ চট্টগ্রামে হালিশহরে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনা। পরের দিন এই ঘটনায় শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা (নং ১৬) দায়ের করেন। র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৭ এর অভিযানে মঙ্গলবার রাতে মানিকগঞ্জে চালিয়ে আলমগীর মিয়াকে (৪৯) গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়ি নারায়ণঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায়। খন্দকার মঈন জানান, নিহত শিক্ষার্থীরা তিন ভাই বোন। সে সবার ছোট। তার পিতা পেশায় রিকশাচালক, মা পোশাক কারখানার কর্মী, বড় ভাই একটি ডেকোরেটরের দোকান এবং ছোট ভাই একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করেন। নিহত ছাত্রী মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় তার পরিবার আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিল। ঘটনার দিন নিহতের মা পোশাক কারখানায় চলে যান এবং পিতা রিকশা নিয়ে বেরিয়ে যান। দুপুরে ভিকটিমের মা বাসায় খাবার খেতে এলে তখন স্কুলের দুই সহপাঠী তাকে জানায় তার মেয়ে প্রাইভেট পড়ার পর স্কুলে যায়নি। পরে অনেক খোঁজ করেও মেয়ের সন্ধান পাননি তিনি। এদিকে তিনি খেয়াল করেন অন্যান্য দিনের মতো প্রতিবেশীর (আসামি) স্ত্রী দুপুরে খাবার খেতে বাসায় এলেও আজ বাসা তালাবদ্ধ। তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে নিহতের বড় ভাই আলমগীরের তালাবদ্ধ বাসার লাইট ও ফ্যান চালু দেখে সন্দেহ হয়। বিষয়টি বাড়ির মালিককে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে এসে রাত ৯টার দিকে দরজার তালা ভেঙে আলমগীরের ঘরের ভেতরে খাটের নিচে হাত পা বাঁধা অবস্থায় ছাত্রীকে পড়ে থাকতে দেখেন। নিহত ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও ধর্ষণের আলামত দেখতে পেয়েছিল বলে জানিয়েছে নিহত ছাত্রীর পরিবার। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে আলমগীর জানিয়েছেন, ঘটনার দিন সকালে নিহত স্কুলছাত্রী কোচিং শেষে বাসায় আসে। তখন গ্রেপ্তার আলমগীর কৌশলে ছাত্রীকে তার বাসায় ডেকে নেন। এরপর জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ছাত্রী তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধর্ষণকারীকে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে ধর্ষকের হাতের আঙুলে কামড় দেয় এবং তার পিতা মাতাকে জানিয়ে দিবে বলে জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রেপ্তার আলমগীর ছাত্রীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বাসায় খাটের নিচে রেখে পালিয়ে যান। বাসা থেকে বেড়িয়ে আলমগীর তার স্ত্রীর যে গার্মেন্টেসে কাজ করে সেখানে যান। স্ত্রীকে জানান যে, এলাকায় এক জনের সঙ্গে সঙ্গে মারামারি হয়েছে, শহর ছেড়ে আত্মগোনে যেতে হবে। র্যাব জানায়, আলমগীর আগে গার্মেন্টসে কাজ করতেন। তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। পারিবারিক দ্বন্দের কারণে তিন মাস আগে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রামের হালিশহরে বসবাস শুরু করেন। তার স্ত্রীও একজন গার্মেন্টসকর্মী। বর্তমানে আলমগীর বেকার। তাই কাজ না থাকায় বাসায় অবস্থান করতেন। আগেও তার বিরুদ্ধে যৌন নিপিড়ন ও ধর্ষণের অভিযোগ ছিল। ঘটনার পর তিনি পালিয়ে প্রথমে ধামরাই, পরবর্তীতে সাভার, রাজবাড়ী ও সর্বশেষ মানিকগঞ্জ এলাকায় আত্মগোপন করেন।