ঢাকা অফিস: শতভাগ বিদ্যুতের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। একইসঙ্গে বিশ্বের ১৩তম আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশে পরিণত হল ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশ। আজ সোমবার বেলা ১টার দিকে পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের (১ম পর্যায়) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে ‘মুজিব শতবর্ষে শতভাগ’ বিদ্যুৎ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন তিনি। এদিন বেলা পৌনে ১২টার দিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এ কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি সুধীসমাবেশে যোগ দিয়ে দেশের শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আসা কথা ঘোষণা দেন। সুধীসমাবেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এখন পর্যন্ত স্থাপিত দেশের সর্ব বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১৩তম আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশ। এই কেন্দ্রে জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব ক্লিন কোল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। সালফার নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ফ্লু-গ্যাস ডিসালফারাইজেশন (এফজিডি) ইউনিট এবং ফ্লাই এ্যাশ নির্গমণ রোধে ৯৯% দক্ষতা সম্পন্ন ইলেক্ট্রো-স্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর (ইএসপি) যুক্ত করা হয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতোমধ্যে, আমরা প্রকল্প এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৩০টি পরিবারকে বাড়ির চাবি ও দলিলাদি হস্তান্তর করেছি। একটি মাধ্যমিক (ভোকেশনাল) ইনস্টিটিউট স্থাপন করে ২০২০ সাল থেকে পাঠদান শুরু করেছি। তাছাড়া, এখানে কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, খেলার মাঠও স্থাপনসহ সবুজ বনায়ন কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে।’ ‘আমাদের নির্মাণাধীন অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু হলে যথাসময়েই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারব। সারা দেশে শিল্পায়নের ভারসাম্য রক্ষা হবে, দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক হবে। মহামারির সময়েও দেশি-বিদেশি কর্মী, প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়ায় আমি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ ‘১৯৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করার পর বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম ১৬০০ মেগাওয়াট, ২০০০-২০০১ অর্থবছরে তা ৪৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিলাম। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি এবং সরকারি-বেসরকারি মিশ্রখাত সৃষ্টির জন্য আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছিলাম। পুরোনো প্লান্টগুলো পুনর্বাসনসহ ক্যাপ্টিভ পাওয়ার জেনারেশনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম, যাতে ব্যবহারের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে বিক্রি করতে পারে। তাছাড়া, তাপবিদ্যুৎ, গ্যাস টারবাইন, জলবিদ্যুৎ, কম্বাইন্ড সাইকেল এবং পারমাণবিক শক্তির মাধ্যমে বহুমুখী বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিয়েছিলাম।’ বলেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে সময়ই আমরা ২০২০ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ‘ভিশন স্টেটমেন্ট ও পলিসি স্টেটমেন্ট অন পাওয়ার সেক্টর রিফর্মস’ প্রণয়ন ও অনুমোদন করি। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে ‘বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার এ্যাকশন প্লান-২০০০’ প্রণয়ন করি। বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মাধ্যমে ৫৪ হাজার ৪৮৯ কি.মি. বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন নির্মাণ করে ১৩ হাজার ৭১৩টি গ্রামকে বিদ্যুতায়িত করি এবং আরও ৩৪ হাজার গ্রামকে বিদ্যুতায়িত করার পরিকল্পনা নিই। আমরা ৩২ হাজার নতুন সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দিই।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছিলাম। সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউঅ্যাবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (স্রেডা), বাংলাদেশ এনার্জি ও পাওয়ার রিসার্স কাউন্সিল (বিপিআরসি) এবং এ ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়নে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি। ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা সঞ্চালন লাইন ২৮ হাজার ৩২০ সার্কিট কিলোমিটারে এবং বিতরণ লাইন ছয় লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করব। গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে সকল সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে এবং পর্যায়ক্রমে সকল মিটার প্রিপেইডে রূপান্তরিত করব। ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আহরণ করা লক্ষ্যে কাজ করছি।’
শতভাগ বিদ্যুতের যুগে বাংলাদেশ
0
Share.