রংপুরে অটোরিকশা চালকদের ধর্মঘট

0

বাংলাদেশ থেকে  রংপুর  প্রতিনিধি: রংপুরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও শ্রমিকদের আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অর্ধদিবস ধর্মঘট পালন করেছে ব্যাটারিচালিত চার্জাররিকশা ও অটোরিকশা চালকদের ছয়টি সংগঠন। সোমবার (২১ মার্চ) ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত টানা ছয় ঘণ্টা এ কর্মসূচি পালন করেন চালক ও শ্রমিকেরা। জাতীয় পার্টিপার্ট’ শ্রমিক নেতাদের নেতৃত্বে রংপুর মহানগর ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান জাতীয় শ্রমিক ঐক্যজোটের ব্যানারে এই ধর্মঘট পালিত হয়। এদিকে অটোরিকশা চালক ও শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। বিশেষ করে অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থীরাসহ স্কুল-কলেজগামী সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিপাকে পড়েন। দুর্ভোগে পোহাতে হয় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকরিজীবীদেরও। অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে আগেই বাসা থেকে বের হয়ে পাঁয়ে হেঁটে কর্ম¯’লে যান। আবার কেউ কেউ বাড়তি ভাড়া দিয়ে লেগুনা ও বাসে করে চলাচল করেছেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় বাস ও লেগুনা সার্ভিস কম থাকায় বেশির ভাগ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন নগরীর শাপলা চত্বরে রুজিনা জামান রোজ নামে এক অভিভাবক দীর্ঘক্ষণ অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে অটোরিকশা চালকরা গাড়ি বন্ধ রাখায় তিনি বাধ্য হয়ে তার ছয় বছরের শিশুসন্তানকে নিয়ে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যান। এই অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ মানুষরা সব সময়ই হয়রানির শিকার হয়। অটোরিকশা চালকরা যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করেন। অতিরিক্ত রিকশা ও অটোরিকশার জটে শহরে চলাচল দুষ্কর। ধর্মঘটের মধ্যে বিকল্প হিসেবে কয়েক ঘণ্টার জন্য বাস সার্ভিস চালু করা হয়। যাত্রীদের দুর্ভোগ এড়াতে নগরীর সাতমাথা, মেডিকেল মোড়, মডার্ন মোড়, টার্মিনাল থেকে দর্শনা মোড় হয়ে নগরের ভেতরে সকাল থেকে ২০টি বাস চলাচল করে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলে অটোরিকশার তুলনায় বাসে বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে। আর হঠাৎ করে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে বাস চলাচল করায় কিছুটা বিশৃঙ্খলাও দেখা যায়। এদিকে নগরীর শাপলা চত্বরে দুপুর সাড়ে এগারোটার দিকে সমাবেশ করেন অটোরিকশা চালক শ্রমিকেরা। এসময় ধর্মঘট নিয়ে রংপুর মহানগর জাতীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বাবু বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে আট দফা দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলন করে আসছি। দাবি আদায়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন আমাদের কোনো দাবি আমলে নেয়নি। তাই আমরা অটোচালকদের ছয়টি সংগঠন একত্রিত হয়ে ধর্মঘট ডেকেছি। তাদের ৮ দফা দাবি হলো- নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রিকশা, ভ্যান ও ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যানের ভাড়া বৃদ্ধি করে নগরের বিশেষ বিশেষ জায়গায় তালিকা টাঙানো, শ্রমিকদের ওপর অন্যায়ভাবে পুলিশের চাপিয়ে দেওয়া জরিমানা আদায় বন্ধ, ব্যাটারিচালিত রিকশার দুই হাজার নতুন লাইসেন্স প্রদান, নগরের শাপলা চত্বর থেকে জিলা স্কুল মোড় পর্যন্ত প্রধান সড়কে রঙ দিয়ে চিহ্নিত করে অটোরিকশা ও চার্জাররিকশা চলাচলে পৃথক লেন, রিকশাভ্যান ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চুরি, ছিনতাই ও প্রতারণা করে এমন অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচার এবং ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, রংপুরে নিবন্ধনের চেয়ে কয়েকগুন বেশি অটোরিকশা ও চার্জাররিকশা চলাচল করছে। অথচ সিটি কর্পোরেশন থেকে ব্যাটারিচালিত চার্জাররিকশা ও অটোরিকশা মিলে ৮ হাজার ২৪০টি নিবন্ধন (লাইসেন্স) দেওয়া রয়েছে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের কিছু দাবি আমার এখতিয়ারে না হলেও অন্য দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। ধর্মঘট নিয়ে রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মেনহাজুল আলম জানান, অটোশ্রমিকদের দাবিগুলো অধিকাংশই আমাদের সংশ্লিষ্ট না। তবে একটি দাবি আমাদের সংশ্লিষ্ট। পুলিশ পেশাদারির বাহিরে কাউকে হয়রানি করে না। রংপুরে অবৈধভাবে অনেক অটো চলে, অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে পুলিশের তৎপরতা চলমান থাকবে।

Share.