সাঁথিয়ায় লোকসানে পেঁয়াজ চাষিরা

0

বাংলাদেশ থেকে পাবনা প্রতিনিধি: পাবনায় সাঁথিয়ায় চলতি বছর পেঁয়াজ ঘরে তুলতে শুরু করে দিয়েছে কৃষকেরা। ফলন ভালো হলেও বর্তমান বাজার দাম কম থাকায় লোকসানে গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট পেঁয়াজের শতকরা প্রায় ১০ ভাগ সাঁথিয়ায় চাষ হয় এবং দেশের মোট চাহিদার শতকরা প্রায় ৭ ভাগ পেঁয়াজ সাঁথিয়ায় উৎপাদিত হয়। কিন্ত দাম কম থাকায় ভালো নেই পাবনার সাঁথিয়ার পেঁয়াজ চাষিরা। পাবনা জেলার সর্বাধিক পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত সাঁথিয়ার কৃষকেরা এবারও ব্যাপকভাবে মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পেঁয়াজ চাষ লাভজনক হওয়ায় এবারও কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। যথাসময়ে সেচ ও সারের পর্যাপ্ত সরবারহ এবং অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করায় চলতি মৌসুমে সাঁথিয়ায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে সাঁথিয়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চলতি বছর এ উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন বেশি হয়েছে। অনুকুল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যায় পেঁয়াজর উৎপাদন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা তীব্র গরম উপেক্ষা করে শ্রমিক নিয়ে মাঠে উপস্থিত হচ্ছে ভোর থেকে পেঁয়াজ তুলতে। শ্রমিক ও পরিবারের মহিলা, শিশুদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন জমি থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহে। পরিবারের অন্য সদস্যরাও পেঁয়াজ মৌসুমে বসে নেই। মহিলারা ভোর রাত থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন শ্রমিকদের খাবার রান্নার কাজে ও পেঁয়াজের মাথা কাটার কাজে। পরিবারের ছোট সন্তানটি এমনকি স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া সন্তানটিও যেন বসে নেই, বাবার কাজের সাথে সেও যেন একজন পেশাদার কৃষক। মহিলারা রাত গভীর পর্যন্ত পেঁয়াজের অগ্রভাগ কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। জানা যায়, অক্টোবরে সাঁথিয়ার কৃষকরা পেঁয়াজের বীজতলা তৈরি করে থাকে। জমিতে জলাবদ্ধতা থাকায় তারা কাঁদা মাটির উপর ছাই ব্যবহার করে বীজতলা করেন। নভেম্বরের শেষদিকে তারা পেঁয়াজ রোপনে ব্যস্ত সময় পার করেন। উপজেলা সাতানির চর গ্রামের রওশন মন্ডল, আবুল বাশার জানান, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপন করতে পেঁয়াজের বীজ তিন হাজার, জমি চাষ দুই হাজার, সার তিন হাজার, কিটনাশক তিন হাজার, জমিতে চারা লাগানো পাঁচ হাজার, সেচ ১২০০, জমি থেকে আগাছা ও গোড়া আলগা করা বাবদ পাঁচ হাজার, জমি থেকে পেঁয়াজ তোলা বাবদ ৩৫০০টাকা লাগছে। প্রায় বিঘায় ২৫/৩০ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সে তুলনায় পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় ভুগছে তারা। উপজেলার সবচেয়ে সাঁথিয়া সদর হাট, কাশিনাথপুর সাপ্তাহিক পেঁয়াজের হাট ঘুরে দেখা গেছে ,বর্তমানে পেঁয়াজ ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা দামে বিক্রয় হচ্ছে। অথচ এক মণ পোঁয়াজ উৎপাদন খরচ হয় এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা। উপজেলার বিষ্ণুবাড়িয়া গ্রামের বাবলু, বাবু জানান, উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কমে পেঁয়াজ বিক্রয় করতে হচ্ছে। যা শ্রমিকদের দিতেই শেষ হচ্ছে। তারা বলেন আমাদের কষ্টের কথা একটু মিডিয়ায় লেখে সরকারকে অবগত করুন। গৌরীগ্রামের গ্রামের পেঁয়াজ রোপনকারী কৃষক আলাউদ্দিন জানান, এত খরচের পরও পেঁয়াজের বাজার এ বছর কম থাকায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার পেঁয়াজের বাজার আমাদের অনুকুলে না রাখলে কৃষকরা এ আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। বোয়াইলমারী গ্রামের আমজাদ ক্ষোভের সাথে জানান, হাটে ৫ মণ পেঁয়াজ এনেছিলাম। প্রায় ১ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ৭৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। ঋণের টাকা দিতে জায়গা জমি বিক্রি করতে হবে। উপজেলার ধনী শ্রেণির কৃষকরা জমির পেঁয়াজ ঘরে সংরক্ষণ করছে বেশি দামের আশায়। তবে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও দরিদ্র শ্রেণির কৃষকদের বিভিন্ন প্রয়োজনে হাটে পেঁয়াজ বিক্রয় করতে হচ্ছে। এতে করে তারা কম দাম পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ছে। সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জীব কুমার গোস্বামী জানান, চলতি বছর জমিতে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত এলাকাভিত্তিক মাঠ পরিদর্শন, মাঠ দিবস, কৃষক সমাবেশ করে চাষিদের সঠিক পরামর্শ দিয়েছেন। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সাধ্যমত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হাটের ইজাদাররা বলেন, মৌসুমের সময় দেশের বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় বাজারগুলোতে দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম কম।

 

Share.