ঢাকা অফিস: দীর্ঘ ৩৩ মাস পর নোয়াখালী যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকা কোম্পানীগঞ্জে পৌঁছাবেন। তার আগমনকে কেন্দ্র করে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা বিরাজ করছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের বড় রাজাপুর নিজ গ্রামে পৌঁছে বাবা-মার কবর জিয়ারতের পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন সেতুমন্ত্রী। এরপর ছোটভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার আয়োজনে নিজ বাড়ির সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক। বিকালে কবিরহাট জিরো পয়েন্টে এলাকাবাসীর সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন ওবায়দুল কাদের। বিকাল ৪টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তিনি ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। পরে কবিরহাট জিরো পয়েন্টে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন ওবায়দুল কাদের। নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ ও কবিরহাট নিয়ে নোয়াখালী-৫ আসন গঠিত। এই সংসদীয় আসন ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আর তার নিজের অসুস্থতার কারণে প্রায় তিন বছর নিজ এলাকায় যেতে পারেননি তিনি। সবশেষ ২০১৯ সালের ১৩ আগস্ট ঈদুল আজহা উদযাপনে নোয়াখালী গিয়েছিলেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী। নিজ নির্বাচনী এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের এই আগমনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর আমেজের সৃষ্টি হয়েছে। আগমনী শুভেচ্ছা বার্তা লেখা ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে এলাকা। ওবায়দুল কাদেরের সফরকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেছেন, সেতুমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে তার বাড়ির সামনে গার্ড অব অনার মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদিকে ওবায়দুল কাদেরের এ সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক সচেতন মহল। বিশেষ করে গত দেড় বছরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে গেছে। দলের বিবদমান দুটি গ্রুপের দ্বিধাবিভক্তির রাজনীতি আরও প্রকট হয়েছে। তার এ সফরে দলের দ্বন্ধ নিরসনের আশা করছেন তারা। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর নানা ঘটনার কারণে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে। আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা। সেতুমন্ত্রীর এই ছোটভাইয়ের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের ভেতর থেকেই। নির্বাচনী ব্যবস্থা, দুর্নীতি এবং নোয়াখালী অঞ্চলের আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব-অসংগতি নিয়ে কাদের মির্জার বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্য সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি করে। তার অনেক খোলামেলা বক্তব্যই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। জানা যায়, কাদের মির্জার পারিবারিক ভুল বুঝাবুঝির কারণেই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। একপর্যাযে উপজেলা এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এই বিরোধ। উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে একজন সাংবাদিকসহ দুইজনের প্রাণহানিও হয়েছে। দুটি গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ৭২টি মামলা হয়। এসব মামলার আসামি হাজার খানেকের মতো এখনো বাড়িছাড়া। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, ওবায়দুল কাদেরের এলাকায় আগমন তাদের মধ্যে প্রাণসঞ্চার করেছে। তারা প্রত্যাশা করছেন, এবার অভ্যন্তরীণ কোন্দলের একটা বিহিত হবে। এলাকার নেতাকর্মীরা সব রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ভূলে সুস্থ রাজনীতি করবেন।