ঢাকা অফিস: রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্নাকে ‘ধন্যবাদপত্র’ পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মাঠ রক্ষার আন্দোলনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মন্ত্রী। মঙ্গলবার (১০ মে) সন্ধ্যায় চিঠিটি হাতে পান সৈয়দা রত্না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, চিঠি পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। সবার সমর্থনে আমাদের আন্দোলন সফল হতে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল প্যাডে স্বাক্ষরসহ পাঠানো চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, সালাম নেবেন। কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠটি এই ওয়ার্ডে বসবাসরত তিন লাখ মানুষের একমাত্র উন্মুক্ত স্থান এবং খেলার মাঠ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। মাঠের অভাবে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে এবং তারা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলেও চিঠিতে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি আরও লেখেন, এই মাঠ রক্ষার ক্ষেত্রে আপনার উদ্যোগের কথা পত্রিকায় পড়তে গিয়ে আমার শৈশব ও কৈশোরকালের কথা মনে পড়ে যায়। সেই সময়ে সিলেট অঞ্চলে অনেক খেলার মাঠ এবং বড় বড় পুকুর বা দীঘি ছিল, যেখানে আমাদের শৈশবকাল অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে অতিবাহিত হয়েছে। বর্তমানে জলাশয়গুলো ভরাট করে অট্টালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং খেলার মাঠগুলোতে বিভিন্ন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে এলাকার যুবসমাজ এবং কিশোর-কিশোরীরা খেলার মাঠের অভাবে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা মাদকদ্রব্য সেবনসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। চিঠির শেষে মন্ত্রী লেখেন, দেশের প্রত্যেক শহরে উন্মুক্ত মাঠ ও পুকুর বা জলাশয় থাকা একান্ত প্রয়োজন। যেসব এলাকা ভূমিকম্পপ্রবণ সেসব এলাকায় এটি আরও বেশি প্রয়োজন। এদিকে, সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর কাছ থেকে ধন্যবাদপত্র পেয়ে উচ্ছ্বসিত সৈয়দা রত্না। তিনি বলেন, একজন মন্ত্রী একটি ভালো কাজের অভিনন্দন দিয়েছেন, এই সংস্কৃতি সত্যিই আমাকে মুগ্ধ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এটি আমার জন্য সত্যিই অভিভূত হওয়ার মতো ব্যাপার। সত্যিই ভালো মানুষেরা ভালো কাজের কদর জানেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর আদেশ ও নির্দেশ পালন করছি ও সঠিক পথে আছি। আজ আমার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একজন ব্যক্তির (মন্ত্রীর) কাছ থেকে অভিনন্দন পেয়েছি, এর সব আনন্দ ও সাফল্য আমার সঙ্গে যারা সহযোগিতা ও সমর্থন জুগিয়েছেন তাদের সবার। গত ২৮ এপ্রিল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৭ সালে আমরা ওই জায়গাটির জন্য অ্যাপ্লাই (আবেদন) করেছিলাম। তবে খোঁজ নিয়ে দেখলাম ওই এলাকায় খেলার জায়গা নেই। প্রধানমন্ত্রীও পরামর্শ দিয়েছেন, যেহেতু খালি জায়গা নেই, বিনোদনের কিছু নেই সেজন্য তিনি বলেছেন পুলিশের জমি সেভাবে থাকুক। কোনো কনস্ট্রাকশন যেন না হয়। যেভাবে চলছে চলতে থাকুক। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। এর আগে ২৪ এপ্রিল মাঠে থানা নির্মাণের প্রতিবাদে ফেসবুক লাইভ করায় সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাদের প্রায় ১২ ঘণ্টা থানা হাজতে আটকে রাখা হয়। এ নিয়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন সংগঠন থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে সরব হয়। সবশেষ পুলিশ মা-ছেলেকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সৈয়দা রত্নার মেয়ে শেউতি শাহগুফতা বলেন, রাত ১টার দিকে মাঠে ট্রাক আসে। পরদিন সকাল থেকে মাঠে ইট, সুরকি ফেলা শুরু হয়। আম্মু সকাল ১০টার দিকে বের হয়ে মাঠের এখান থেকে একটা ফেসবুক লাইভ করেন। তখন এক কথা দুই কথায় পুলিশ মাকে ধরে ভ্যানে ওঠায়।
তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘ধন্যবাদপত্র’ পেলেন রত্না
0
Share.