বিনোদন ডেস্ক: বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির একটি পদ নিয়ে দুই তারকার দ্বন্দ্ব কয়েক মাস ধরে চরমে। অবস্থা এমন যে, কেউ কাউকে নাহি ছাড়ে। সেই দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে আদালতে। হয়েছে মামলা, তার বিপরীতে আপিল। তবে আসেনি সুরাহা। শুনানির তারিখ পেছানো হচ্ছে বারবার। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, কাদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে। শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে চিত্রনায়ক জায়েদ খান এবং চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কথাই বলা হচ্ছে। এই দ্বন্দের শুরু হয়েছিল শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আগে থেকেই। একে অন্যকে তখন কথার তীরে ঘায়েল করছিলেন জায়েদ-নিপুণ। ভোট পেতে শিল্পীদের দিচ্ছিলেন নানা প্রতিশ্রুতি, চলছিল নির্বাচনী প্রচারণা, মিটিং মিছিল। এমন চরম উত্তেজনার মধ্যেই গত ২৮ জানুয়ারি এফডিসিতে অনুষ্ঠিত হয় শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচন। ওইদিন সন্ধ্যা থেকে রাতভর নানা নাটকীয়তার পর পরদিন ভোরে ঘোষণা হয় ফলাফল। সেখানে পরাজিত হন নিপুণ। শিল্পীদের ভোটে জিতে টানা তৃতীয়বারের মতো সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জায়েদ খান। অর্থাৎ, তিনি এর আগে দুই মেয়াদে এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার তিনি পান হ্যাটট্রিক জয়। কিন্তু নিপুণ তার পরাজয় মানেননি। তিনি প্রথমে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের লিখিত অভিযোগ করেন নির্বাচনী আপিল বোর্ডে। সেখানে তাল না পেয়ে নালিশ জানান সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে, যেটির অধীনে শিল্পী সমিতি নিবন্ধিত। সেখান থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয় নির্বাচনী আপিল বোর্ডকে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়ে নির্বাচনী আপিল বোর্ডে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান এফডিসিতে এক বৈঠক ডেকে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে জায়েদ খানসহ দুইজনের প্রার্থিতা বাতিল করেন। পাশাপাশি নিপুণকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন জায়েদ খান। হাইকোর্ট আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জায়েদ খানকে তার পদে বহাল থাকার নির্দেশ দেন। এছাড়া জায়েদের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ নয়, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন। সেই থেকে শুরু আদালতের খেলা। যে খেলা এখনো চলমান। এই গোটা ঘটনায় জায়েদ খান ও নিপুণের মধ্যে অনেকটা দা-কুমড়া সম্পর্ক। কেউ কারও কথা শুনতেই পারেন না। তবে দুজনে যেহেতু একই ইন্ডাস্ট্রির মানুষ, তাই ঘটনাচক্রে তাদের দেখা হতেই পারে। তখন কি তারা এক অন্যের সঙ্গে কথা বলেন, নাকি এড়িয়ে যান? এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে যে কারও মনে। এ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয় জায়েদ খানের সঙ্গে। তিনি বিরক্তির সুরে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তার (নিপুণ) সঙ্গে কথা বলার কী আছে? ঈদের আগে মুখোমুখি হলেও তার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।’ শিল্পী সমিতির পদ ছাড়া নিপুণের সঙ্গে অন্য কিছু নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে কি না? জায়েদ খান বলেন, ‘অন্য কোনো বিষয়ে তার সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব নেই। সে যেটা করছে সেটা অন্যায়। আমি সঠিক বিচারের অপেক্ষায়। শিল্পীরা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। আমার কোনো ভুল থাকলে ভোটের পরদিনই পিছিয়ে যেতাম।’ একই বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারের সঙ্গেও। তবে তাকে বারবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। একবার ফোনকল কেটেও দেন। পরে হোয়াসঅ্যাপে মেসেজ দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি। এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে দ্বন্দ্বের মাঝেই নিপুণের বিরুদ্ধে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে আদালত অবমাননার মামলা করেন জায়েদ খান। অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেছেন নিপুণ। যেখানে আদালত পদটির ওপর স্থিতিবস্থা দিয়ে রেখেছেন। সেই মামলার শুনানি গত সোমবার আবারও পিছিয়েছেন আপিল বিভাগ। নতুন দিন নির্ধারণ করেছেন আগামী ৫ জুন। সেই পর্যন্ত শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ খালি রাখার নির্দেশ আছে। তবে এসব কিছুকে থোড়াই কেয়ার করছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। তিনি শিল্পী সমিতির সকল কার্যক্রমেই অংশ নিচ্ছেন। এরই মধ্যে সমিতি তিনটি মিটিং করেছে। প্রতিটিতেই হাজির ছিলেন নিপুণ। এছাড়া গত ৮ মার্চ নারী দিবসে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে নারী শিল্পীদের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন নিপুণ। গত ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে যায় শিল্পী সমিতি। সেখানেও উপস্থিত ছিলেন নিপুণ। এছাড়া রমজানে রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় সমিতির ইফতার পার্টির আয়োজনও হয় এই নায়িকার নেতৃত্বে। মোটকথা, আদালতের চূড়ান্ত রায় না হলেও সমিতির সবখানেই কর্তৃত্ব বজায় রেখেছেন নিপুণ। অন্যদিকে, জায়েদ খান রয়েছেন নিশ্চুপ। তিনি আদালতের চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায়। তার আত্মবিশ্বাস, চূড়ান্ত রায়ে তিনি বিজয়ী হবেন। জায়েদ খান শুরু থেকেই বলে আসছেন, তিনি শিল্পীদের ভোটে নির্বাচিত। তাই আদালত তার পক্ষেই রায় দেবেন। তবে শেষপর্যন্ত এই মামলা মামলা খেলায় কে জেতেন, সেটাই দেখার।