ঢাকা অফিস: প্রকৃতি ও কৃষকের অন্যতম বন্ধু প্রাণী ব্যাঙ। বিশ্বব্যাপী এই প্রজাতি সংরক্ষণে প্রতি ব্ছর পালন করা হয় বিশ্ব ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস। ব্যাঙ এবং ব্যাঙের আবাসস্থল সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবারের দিবসটি বাংলাদেশে ভিন্নভাবে পালন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের নেচার স্টাডি এন্ড কনজারভেশন ক্লাবের শিক্ষার্থীরা। সাতছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৪ তম ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস ২০২২ কার্যক্রম নিয়ে সকাল সাড়ে ৭ টায় ক্লাবের পক্ষ থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের প্রধান গেট থেকে ব্যানার নিয়ে র্যালি শুরু হয়। এই র্যালি পরবর্তীতে সাতছড়ি চা বাগানের ভিতর পর্যন্ত চলমান ছিলো। এবারের ১৪তম ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস ২০২২ সাফল্যমন্ডিত করতে ক্লাবের সদস্যবৃন্দ বিভিন্ন যায়গায় বিভিন্ন স্লোগানে ব্যাঙয়ের হুমকি এবং এদের স্বভাব নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। র্যালি এবং বিভিন্ন সময়ে ক্ষেত্র বিশেষে তারা স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করেছিল “রক্ষা পেলে ব্যাঙয়ের আবাস, আমরা পাবো সুন্দর নিবাস” তাদের ব্যানারে স্লোগান হিসেবে ছিলো “প্রকৃতিতে থাকলে ব্যাঙ বাঁচবে কৃষক, বাঁচবে গ্রাম” ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবসে তাদের টি শার্টে স্লোগান হিসেবে ছিলো “কীটনাশকের অতি ব্যবহার ধ্বংস করে ব্যাঙয়ের পরিবার” এছাড়াও বাচ্চারা সবচেয়ে বেশি যে স্লোগানে সাড়া দিয়েছে সেটা হলো “বর্ষাকালে ডাকে ব্যাঙ ঘ্যাঙ্গোর ঘ্যাং ঘ্যাঙ্গোর ঘ্যাং”। এবারের ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবসটিকে মজার এবং শিক্ষনীয় করতে ব্যাঙের মাস্কট প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাচ্চাদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ ধরনের আলোচনা সভা। এই আলোচনা সভায় এবারের ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবসের অর্গানাইজার সজীব বিশ্বাস ব্যাঙয়ের পরিচয়, ব্যাঙের আচরন, ব্যাঙের ডাক নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি ব্যাঙের মাস্কট বিভিন্ন ভঙ্গিমায় তা উস্থাপন করেন। সাতছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাচ্চারা খুবই মজার সাথে বিষয়গুলো শুনেছে এবং উপভোগ করেছে। ব্যাঙ মানুষের এবং প্রকৃতির বন্ধু এই উপলব্ধি বাচ্চাদের মাঝে সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের সাথে প্রতীকী হিসেবে মাস্কট ব্যাঙটি সবার সাথে হাত মিলিয়ে, জড়িয়ে ধরে, কোলে নিয়ে বন্ধুত্ব করে। তারপর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় মানুষদের উদ্দেশ্যে ব্যাঙ নিয়ে সহজ এবং সাবলীল ভাষায় ব্যাঙের উপকারিতা এবং দূষণে বন্যপ্রাণীর উপর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে শিক্ষামূলক বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শায়ের মাহমুদ ইবনে আলম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুবই আগ্রহের সহিত তার কথা শোনেন এবং সাড়া দেন। ব্যাঙের দেহের রং, ব্যাঙের ডিম কেমন থাকে, ব্যাঙের ব্যাঙ্গাচি কেমন এসব বিষয়ে ধারনা দিতে এবারের ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবসে ছিলো চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাচ্চারা তাদের সামনে প্রদর্শিত সাধারণ এবং বিপন্ন প্রজাতির ব্যাঙ, ব্যাঙের ব্যাঙ্গাচি, ব্যাঙের ডিম দেখে চিত্রাঙ্কন করেছে। বিদ্যালয়ের চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণির বাচ্চাদের জন্য এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিলো। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উপকরন হিসেবে সবাইকে পেন্সিল, রাবার, কাটার প্রদান করা হয়। দুই শ্রেণির সর্বমোট ৩১ জন শিক্ষার্থী খুবই আগ্রহের সহিত এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত প্রথম তিন জনকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে তাদের ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় হয়েছে যথাক্রমে প্রতিক কর্মকার (পঞ্চম শ্রেণি), বেদনা মুন্ডা (চতুর্থ শ্রেণি) এবং উজ্জল গোয়ালা (পঞ্চম শ্রেণি)। ব্যাঙের চলন নিয়ে ধারনা দেবার জন্য বাচ্চাদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিলো ব্যাঙ দৌড় প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণির মোট ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। ১৪তম ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবসে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. অনির্বাণ সরকার, ড. শায়ের মাহমুদ ইবনে আলম। উক্ত ওয়েবিনারে বাংলাদেশের ব্যাঙ নিয়ে সার্বিক দিক থেকে সাধারন কিছু কথা তুলে ধরেন ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজীব বিশ্বাস। উক্ত ওয়েবিনারে বাংলাদেশের ব্যাঙের অবস্থা, গবেষণা এবং হুমকি নিয়ে মূল্যবান বক্তব্য এবং স্লাইড উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ কামরুল হাসান। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী নানা কারণে কমছে ব্যাঙের প্রজাতি। উভচর প্রজাতির এই প্রাণীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এখন বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে, ব্যাঙ সংরক্ষণের প্রত্যয়ে বিশ্বের অন্তত ৫৮টি দেশে পালন করা হয় ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস।
ব্যাঙ সংরক্ষণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
0
Share.