বাংলাদেশ থেকে পটুয়াখালী প্রতিনিধি: সাগরপারের জনপদ কলাপাড়ায় গত ২২ বছরে বেড়িবাঁধের রিভার সাইটের অন্তত ২০০ কিলোমিটার এলাকার ম্যানগ্রোভ প্রজাতির হাজার হাজার গাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফলে সবুজ দেয়ালখ্যাত ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটার প্রাথমিক রক্ষাকবচ নেই। বাঁধগুলো অরক্ষিতে হয়ে গেছে। ঝুঁকি বেড়েছে বাঁধের। পাশাপাশি তীব্র ঝড়-জলোচ্ছ্বকালীন মানুষের জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি বাড়ছে। মানুষ আশ্রয় নেয়ার মতো আশ্রয় কেন্দ্র থাকলেও সম্পদ থাকছে অরক্ষিত। আজ ৫ জুন। বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এই দিবসকে ঘিরে এ জনপদের মানুষ তাঁদের এমন দূর্যোগকালীন রক্ষাকবচ হারানোর কথা জানালেন। বাঁধের বাইরের এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ রক্ষার দাবিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন গতকাল শনিবার সকালে ধোলাইর মার্কেট এলাকা গঙ্গামতি মানববন্ধন সমাবেশ করেছে। সরকার যখন মানুষকে দূর্যোগের কবল থেকে রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্রসহ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল রক্ষায় বহুবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে তখন বনবিভাগ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদসহ একশ্রেণীর মানুষের নিধন তান্ডবে এই বনাঞ্চল হারিয়ে গেছে। প্রাচীন এই গাছগুলো এখনও যেসব এলাকায় রয়েছে তাও মেরে ফেলার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এসব গাছ উজাড় করে সেখানে মানুষ বাড়িঘরসহ পুকুর তৈরি করছে। করা হয়েছে ইটভাঁটি থেকে শুরু করে মাছের ঘের। এছাড়া বাঁধ মেরামতের নামে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার ফলেও অন্তত ৩০/৩৫ কিলোমিটার এলাকার ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ মারা পড়ছে। বেড়িবাঁধের ৪৮ নম্বর পোল্ডারে এই দৃশ্য দেখা গেছে। ২০০৭ সালের সিডরের মতো সুপার সাইক্লোনে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের প্রাথমিক ঝাপটাও এই সবুজ দেয়ালখ্যাত ম্যানগ্রোভ প্রজাতির প্রাচীন গাছগুলো বুক পেতে ঠেকিয়ে দিয়েছে। মূলত ২০০১ সাল থেকে বাঁধের রিভার সাইটের গাছগুলো নিধনের মহোৎসব চলে আসছে। একসময় বাঁধের বাইরে ২০-৫০ মিটার প্রস্থ ছইলা-কেওড়া, গেওয়া, গোলপাতা, বাইনসহ গুল্মজাতীয় গাছপালা লতাপাতায় আচ্ছাদিত ছিল। বাঁধের ওপর দিয়ে চলতে গেলে শরীর ছম ছম করত। বন্যপ্রাণী বসবাস করত। আর এখন এসব বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বনাঞ্চল ছিল লতাচাপলী, কুয়াকাটা, ধুলাসার, বালিয়াতলী, মিঠাগঞ্জ, ডালবুগঞ্জ, মহিপুর, ধানখালী, চম্পাপুর ও লালুয়ায়। লতাচাপলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, ইউনিয়নে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। তিনি জানালেন, আশি শতাংশ এলাকার ম্যানগ্রোভ বাগান নেই। এগুলো থাকলে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস গাছের ওপর আছড়াইয়া পড়তো। এখন তো বাঁধের ওপর পড়বে। দূর্যোগকালীন জলোচ্ছ্বাস ঝুঁকি বাড়ছে। গঙ্গামতির ধোলাইর খাল মার্কেটের দোকানি সাইফুল ইসলাম জানান, এই বাঁধের দুই দিকে গভীর বন ছিল। যা ২০০১ সাল থেকে ধ্বংস শুরু হয়। এখন বেড়িবাঁধ পানির ঝাপটায় ভেসে যাবে। কারণ পানির ঝাপটা প্রতিরোধের মতো কোন গাছপালা নেই। ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছপালার বিকল্প নেই বলে মতামত দিলেন ধুলাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। তিনি জানান, এই বাগান দূর্যোগকালে দেওয়ালের মতো জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা ঠেকায়। অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিগণ জানান, অন্তত আশি ভাগ বেড়িবাঁধের বাইরের ভেতরের গাছপালা বনাঞ্চল নেই। কেটে সাবাড় করে দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ হোসেন জানান, কলাপাড়া উপজেলায় ৩২৯ দশমিক ৫১ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ রয়েছে। তিনিও স্বীকার করেন এই বাঁধের দুই পাশেই ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল ছিল। সঠিক তথ্য বনবিভাগ দিতে পারবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। কারণ এমনিতেই কিছু গাছ জন্মেছে, বাকিটা বনবিভাগ সৃজন করেছে। তবে নতুন জেগে ওঠা চরে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের চারা রোপনের কাজ চলমান রয়েছে।