ঢাকা অফিস: আগামী সেপ্টেম্বরে নির্ধারিত ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচ্যসূচিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ইস্যুটি গুরুত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনায় এই ইস্যুটি তুলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ভারতের সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা যেমন- উগ্রবাদ বৃদ্ধি, মাদক পাচারের পাশাপাশি নারী ও শিশু পাচার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ মোমেন বলেন, ‘আমাদের জন্য রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সম্ভাব্য সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ (মিয়ানমার) প্রত্যাবাসন। আমি নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, তখন এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ভারত কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে সে বিষয়টি উত্থাপন করবেন।’ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে সাহায্যের পাশাপাশি এই সমস্যার টেকসই সমাধানের দিকেও নজর দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ রাখেন পররাষ্ট্র সচিব। বলেন, ‘যে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী, এর একমাত্র সম্ভাব্য সমাধান তাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসন।’ এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ভারত কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে মোমেন বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। তবে আমি মনে করি অন্য দেশগুলো মিয়ানমারের সাথে সম্মত হলে সেটি (প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায়) কিছু সাহায্য করতে পারে।’ ‘কারণ মিয়ানমার ও বাংলাদেশের অভিন্ন প্রতিবেশি হচ্ছে ভারত। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে অতীতেও ভারতকে অনুরোধ করেছি এবং ভবিষ্যতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে অনুরোধ অব্যাহত রাখবো।’ পররাষ্ট্র সচিব জানান, তিনি গত বছর ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবধন শ্রীংলার সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। সচিব বলেন, ‘বর্তমানে কক্সবাজার একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা। রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচর দ্বীপে স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে এটিকে ঘনবসতিমুক্ত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এটি একটি সাময়িক সমাধান।’ ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে ষাট ভাগের বেশি মানুষ খুবই অল্পবয়সী।…তাই সেখানে মৌলবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে…এবং স্পষ্টতই বাংলাদেশ ছাড়াও পাশ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর জন্যও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।’ রোহিঙ্গাদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি তুলে ধরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ১২ ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা দেখতে পেয়েছি। হত্যা, মাদক এবং মানব পাচার, অস্ত্র এবং সোনা পাচার, ধর্ষণ, ডাকাতি, অপহরণ, মুক্তিপণ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীদের সদস্যদর ওপর হামলার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে এরা।’ কক্সবাজার পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে ৭১টি হত্যা, ৭৬২টি মাদক পাচার, ৮৭টি অস্ত্র মামলা, ২৮টি মানব পাচার, ৬৫টি ধর্ষণ মামলা, ১০টি ডাকাতি, ৩৪টি অপহরণ এবং মুক্তিপণ এবং ৮৯টি বিভিন্ন বিষয়ের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।