ঢাকা অফিস: পশুর মূত্রথলি, পিত্ত, তিল্লি, লেজ, রক্ত, হাড়, শিং, চর্বি কোন কিছুই এখন আর ফেলনা নয়। সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রয়েছে বহুমাত্রিক ব্যবহার ও বিরাট অর্থমূল্য। এদের ঘিরে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগে দেশেই গড়ে উঠেছে হরেক পণ্যের শিল্প-কারখানাও। হচ্ছে রফতানি। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ বোন এক্সপোর্টার এ্যান্ড মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশন খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেয়া গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হচ্ছে। জানা যায়, পশুর বহুমাত্রিক ব্যবহারের কারণে দেশে এখন পশুর বর্জ্যরে ব্যবসার অল্প হলেও প্রসার ঘটেছে। এর বিশ্ববাজারও বড় হচ্ছে। দেশী লেনদেন ও বৈদেশিক আয় মিলে ইতোমধ্যে পশুর বর্জ্যরে বাজার ছাড়িয়েছে হাজার কোটি টাকার ওপরে। ফলে দেশে পশুর বর্জ্যরে চাহিদা এবং দাম দুটোই বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে হাড়। ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জিঞ্জিরা ও হাজারীবাগেই এখন পশুর প্রত্যঙ্গের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শতাধিক। দেশের সাবান শিল্পের চর্বির বড় জোগানদারও হাজারীবাগের কারখানাগুলো। মাংস ব্যবসায়ী, পথশিশু, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ফেরিওয়ালারা এসব বর্জ্যরে প্রধান সংগ্রাহক, যা তারা হাজারীবাগ পোস্তাসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন ভাঙ্গারি দোকানে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেজি হিসেবে বিক্রি করে থাকেন। জানা গেছে, পশুর অ-কোষ দিয়ে সসেজ রোল এবং স্যুপসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা হয়। বিশেষ করে গরুর যৌনাঙ্গ দিয়ে তৈরি স্যুপ চীনাদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। গরুর পিত্ত, তিল্লি ও কলিজার সঙ্গে রাসায়নিক উপাদানের সংমিশ্রণে উৎপাদন করা হয় বিভিন্ন জীবন রক্ষাকারী সিরাপ। হাড় দিয়ে তৈরি হয় ক্যাপসুলের শেল বা খোলসহ শিল্পের যুগান্তকারী উপাদান জিলেটিন, যা বিভিন্ন খাদ্য ও প্রসাধনী পণ্যেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। অর্থাৎ ওষুধ ও সিরামিক শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও হাড় ব্যবহৃত হয়। শিশুসামগ্রী, শো-পিসসহ ঘর সাজানোর নানা উপকরণেও হাড়ের ব্যবহারের জুড়ি নেই। অপরদিকে ক্ষুর দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ক্লিপ ও লেজ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ব্রাশ, আর চর্বিতে তৈরি হয় সাবান। সাতপল্লা বা গোল্লাও তাদের কাছে উন্নতমানের খাবার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। আর নাড়ি দিয়ে জাপানে তৈরি করা হয় মজাদার সুস্যেট।
পশুর বর্জ্য হাজার কোটি টাকার ওপরে
0
Share.