শনিবার, নভেম্বর ২৩

কানাডায় শিশুদের নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন পোপ

0

ডেস্ক রিপোর্ট: কানাডায় চার্চ পরিচালিত আদিবাসী শিশুদের স্কুলে নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষমা চাইতে সোমবার দেশটিতে পৌঁছেছেন পোপ ফ্রান্সিস। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ আলবার্টার মাস্কওয়াসিসে এরমিনস্কিন ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের প্রাক্তন জায়গাটি পরিদর্শন করার পর তিনি আদিবাসী শিশুদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। খবর আল-জাজিরার। আদিবাসী স্কুলের বেঁচে যাওয়া শিক্ষার্থী, আদিবাসী নেতা এবং প্রবীণদের অংশগ্রহণে সেখানে একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সকলের সামনে পোপ বলেন, আমি এখানে এসেছি কারণ আপনাদের মধ্যে আমার অনুশোচনামূলক তীর্থযাত্রার প্রথম ধাপটি হল ক্ষমা চাওয়া। আবারো আপনাদের জানাতে চাই যে আমি গভীরভাবে দুঃখিত। তিনি আরো বলেন, শিশুদের সঙ্গে স্কুলে যেটি ঘটেছিল সেটি খ্রিস্টানধর্ম বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়। বিষয়টি কোনোভাবেই যীশু খ্রিস্টের সুসমাচারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং এটি একটি বিপর্যয়কর ত্রুটি ছিল। আমি বিনীতভাবে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের কারণে সংঘটিত মন্দ কাজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। কানাডার আদিবাসী শিশুদের সভ্য করার লক্ষ্যে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে চার্চ পরিচালিত স্কুলে পাঠানো হত। ১৮৬৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দেড় লক্ষাধিক আদিবাসী শিশুকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে এ ধরণের ১৩০টির বেশি স্কুলে পাঠানো হয়। স্কুলগুলা মূলত কানাডার সরকার ও ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ (গির্জা) পরিচালনা করতো। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার অনুমতি পেত না এসব শিশুরা। এমনকি তাদের বেশিরভাগকে নির্যাতন-নিপীড়ন করা হতো বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, এসব স্কুলে থাকার সময়ে প্রায় ছয় হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। আবাসিক স্কুলগুলোর অব্যবস্থাপনাকে এর বড় কারণ হিসেবে দেখা হয়। এক শতাব্দিরও বেশি সময় কানাডা সরকার স্কুলগুলোতে অর্থায়ন করলেও এগুলো পরিচালনা করতো ক্যাথলিক গির্জা। সবশেষ স্কুলটি ১৯৯৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালের মে মাসে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার কামলুপস এলাকার একটি পুরনো আবাসিক স্কুলের ভবন থেকে ২১৫ শিশুর দেহাবশেষ উদ্ধার হয়। এসব শিশু আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ান বলে জানা যায়। ওই স্কুলটি ১৯৭৮ সালে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, গভর্নর জেনারেল মেরি সাইমন, অ্যাসেম্বলি অব ফার্স্ট নেশনস জাতীয় প্রধান রোজঅ্যান আর্চিবল্ড এবং বেশ কয়েকজন ফেডারেল আইনপ্রণেতাও উপস্থিত ছিলেন। ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল হিস্ট্রি অ্যান্ড ডায়ালগ সেন্টার জানায়, স্কুল থেকে বেঁচে যাওয়া শিক্ষার্থীরা তাদের মাতৃভাষা বলার জন্য শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি শাস্তির বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছে। ১৯০৩ সালে যক্ষ্মা রোগসহ কমপক্ষে ১৫ জন শিশু স্কুলে পড়ার সময় মারা গিয়েছিল। ১৯২০-এর দশকে এক সরকারি সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্কুলের অর্ধেক ছাত্রই যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে স্কুলটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। ২০০৮ সালে ফেডারেল সরকার স্কুল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছিল। সেইসঙ্গে বেঁচে থাকাদের ক্ষতিপূরণ হিসাবে বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার প্রদান করে। যদিও প্রোটেস্ট্যান্ট এবং অ্যাংলিকান উভয় গির্জাই স্কুল চালাত, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ (প্রায় ১৩০) স্কুল ক্যাথলিক চার্চ দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। তবুও বছরের পর বছর ধরে ভ্যাটিকান বারবার পোপের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানকে প্রতিহত করেছে। এর আগে ২০১৭ সালেও কানাডায় ক্যাথলিক চার্চ পরিচালিত স্কুলগুলোতে আদিবাসী শিশুদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছিল তার জন্য পোপ ফ্রান্সিসকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

Share.