ঢাকা অফিস: জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের আওতায় শনিবার শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর পরিবেশে সারাদেশে ২ কোটির বেশি শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে। ক্যাম্পেইনকে কেন্দ্র করে দেশের কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এবং ক্যাম্পেইনটি সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। শনিবার বাংলাদেশ সময় বেলা বারটায় শ্যামলীর ঢাকা শিশু হাসপাতালে জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপিত হয়। নৌবাহিনীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ভিটামিন ‘ এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালে ক্যাম্পইনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য মো. আব্দুল আজিজ , স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ , ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ প্রমুখ। নির্ধারিত বয়সের প্রত্যেকে শিশুকে নির্ধারিত ক্যাপসুল খাওয়াতে কেন্দ্রসমূহে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালে এক গবেষণায় দেখা যায় ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৪.১ শতাংশ শিশু রাতকানা রোগে আক্রান্ত। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার জাতীয় রাতকানা প্রতিরোধ প্রকল্প শুরু করেন। এর অংশ হিসেবে বাড়ি বাড়ি যেয়ে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো অব্যাহত রাখার কারণে বর্তমানে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত রাতকানা রোগের হার শতকরা ১ ভাগের নীচেই রয়েছে। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কারণে একটি শিশু রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি নানা শারীরিক জটিলতা থেকে রেহাই পায়। ভিটামিন ‘এ’ শিশুদের বহুবিধ উপকার করে, যেমন-শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহ যেমন-ডায়রিয়া ,আমাশয়, কলেরা, প্রদাহ যেমন- নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, টাইফয়েডসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগে ঘন ঘন আক্রান্ত হওয়া রোধ করে যা শিশুকে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। এছাড়া ভিটামিন ‘এ’ শিশুর ডায়রিয়ার ব্যাপ্তিকাল হ্রাস করে এবং হামজনিত জটিলতা হ্রাস করে। শনিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান , ভিটামিন ‘ এ’ ক্যাপসুল ক্যাম্পেইন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্যাম্পেইনটি সফল করাতে ভ্রাম্যমান কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, ব্রীজের টোল, বিমান বন্দর, রেল স্টেশন, খেয়াঘাট ইত্যাদি স্থানে অবস্থান করে। প্রতিটি কেন্দ্রে কমপক্ষে ৩ জন প্রশিক্ষিত সেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পালন করা হয়। তবে দুর্গম এলাকায় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সফল করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন পর্যালোচনার জন্য ক্যাম্পেইন-এর দিন প্রতিটি উপজেলায়, জেলায় ও কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা থাকে। এ কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এদেশে প্রায় ২৪ ভাগ শিশুমৃত্যু রোধ করা সম্ভব। শনিবার দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত কেন্দ্র খোলা রাখা হয়। ভিটামিন এ ক্যাম্পনকে কেন্দ্র করে দেশের কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান মহাপরিচালক। এদিকে, দেশব্যাপী জাতীয় ভিটামিন ‘ এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন পালনের অংশ হিসেবে নৌবাহিনীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ভিটামিন ‘ এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিবার কল্যাণ(বানৌপক) সংঘের প্রেসিডেন্ট ডা. আফরোজা আওরঙ্গজেব শনিবার ঢাকার মিরপুরস্থ নাবিক কলোনিতে শিশু কল্যাণ এবং চিকিৎসা কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। এ সময় নৌবাহিনী পরিবার কল্যাণ সংঘ, ঢাকা শাখা ও বিএন লেডিস ক্লাবের চেয়ারম্যান বেগম মনিরা রওশন ইকবালসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
‘আনন্দমুখর পরিবেশে সারাদেশে ২ কোটির বেশি শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে’
0
Share.