স্পোর্টস ডেস্ক: ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে তুরস্কের সেরা সাফল্য এসেছিল ২০০২ সালে জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ায় বসা আসরে। সেবার সেমিফাইনাল খেলেছিলো তুরস্ক। সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ফরোয়ার্ড হাকান শুকুর। কিন্তু ভাগ্যের মারপ্যাঁচে এখন সেই দলের অধিনায়ক উবার চালকের কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সম্প্রতি জার্মান সংবাদমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শুকুর কথা বলেছেন নিজের বর্তমান জীবন ও ফুটবল ছাড়ার পরবর্তী সময়ের সংগ্রাম নিয়ে। দেশে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার কারণে এখন প্রায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে। জীবিকার তাগিদে বেছে নিয়েছেন উবার চালকের কাজ। তুরস্কের হয়ে বিশ্বকাপ মাতানো শুকুর খেলেছেন ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাব ইন্টার মিলানে, ছিলেন গ্যালাতাসায়েরও ফরোয়ার্ড। খেলা ছাড়ার পর ২০১১ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের জাস্টিস এন্ড ডেভেল্পমেন্ট পার্টিতে। কিন্তু বছর দুয়েক পর সরকারি দলের সঙ্গে ফেথুল্লাহ গুলেনের মতবিরোধের কারণে পার্টি ছেড়ে দেন হাকান শুকুর। পরে ২০১৬ সালে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুথানের পর তার বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। অভিযোগ আনা হয় এই অভ্যুথানের পেছনে ছিলো শুকুরেরও যোগসাজশ। তখনকার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে শুকুর বলেন, ‘আমার স্ত্রীর বুটিক শপে পাথর ছোড়া হতো, রাস্তাঘাটে আমার বাচ্চাদের হেনস্থা করা হতো। আমার যেকোনো মন্তব্যের পর হুমকি প্রদান করা হতো। আমি যখন চলে এলাম, তারা আমার বাবাকে বন্দী করে এবং আমার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ফেলে। অথচ তারা কেউই বলতে পারেনি অভ্যুথানে আমার কী ভূমিকা ছিলো। আমি কখনোই বেআইনি কিছু করিনি। আমি বিশ্বাসঘাতক কিংবা জঙ্গী নই।’ তুরস্কের সংবাদমাধ্যমের মতে, শুকুরের বাবাকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ঠিকই, তবে তিনি এখন গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। তারা বাবা এবং মা- দুজনই ক্যান্সার আক্রান্ত। এই অবস্থার পেছনে সরাসরি এরদোয়ানকেই দায়ী করেন শুকুর। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও আমার কিছুই বাকি নেই। এরদোয়ান আমার সবকিছু ছিনিয়ে নিয়েছে। আমার বাঁচার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, এমনকি কাজ করার স্বাধীনতাও নিয়ে গেছে।’ মূলত একারণেই দেশান্তরী হয়ে এখন উবার চালক তিনি, ‘এরপর আমি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসি এবং শুরুতে একটা ক্যাফে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে অদ্ভুত সব লোকের আনাগোনা বেড়ে যায়। তাই এখন আমি উবারের গাড়ি চালাই এবং বই বিক্রি করি।’ শুকুর সাফ জানান, তিনি এরদোয়ান সরকারের ঘোরতর বিরোধী, তবে ভালোবাসেন নিজ দেশ তুরষ্ককে। তাই তো বলেন, ‘আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, আমার পতাকাকে ভালোবাসি।’ এসময় শুকুর নিজ দেশের সংবাদ মাধ্যমের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ক্রীড়াবিদদের কিছু বলারও স্বাধীনতা ছিলো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা কথা বললেই তুরস্কের সংবাদ মাধ্যম আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করতো। তারা এটা নিশ্চিত করতো যে, অন্যান্য ক্রীড়াবিদও যেনো মুখ খুলতে না পারে। আমি শুধু সেসব কাজই করেছি, যা আমার দেশের জন্য দরকার ছিল। কিন্তু যেহেতু আমার নাম হাকান শুকুর, তাই মানুষের ভয়ের কারণও ছিলাম আমি।’
তুরস্কের বিশ্বকাপ তারকা এখন উবার চালক
0
Share.