ডেস্ক রিপোর্ট: রবিবার তেহরানের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সঙ্গে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন মাধ্যমে এ সংঘাতের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। সংঘাতের কারণে তেহরানের শরিফ ইউনিভার্সিটির গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী আটকে পড়েছে বলে জানা গেছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর কুর্দি শহর সাকেজে ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় শুরু হওয়া সরকার বিরোধী বিক্ষোভ কয়েক বছরের মধ্যে ইরানের কর্তৃপক্ষের বিরোধিতার সবচেয়ে বড় প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে। আন্দোলনে অনেকে আবার ইরানে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসলামি ধর্মগুরুর শাসনের পতন ঘটানোরও আহ্বান জানিয়েছেন। ১ লাখ ৬০ হাজার ফলোয়ার সমৃদ্ধ ১৫০০তাসভির নামের অ্যাক্টিভিস্ট টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, ঐতিহ্যগতভাবে ভিন্নমতের কেন্দ্রস্থল শরিফ বিশ্ববিদ্যালয়কে কয়েক ডজন দাঙ্গা পুলিশ ঘিরে রেখেছে। নিরাপত্তা বাহিনী শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দিতে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করছে এবং দূর থেকে গুলি চালানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে। আরেক ভিডিওতে দেখা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ে আটকে পড়া কয়েক ডজন শিক্ষার্থীকে তাড়া করছে। ওই টুইটার অ্যাকাউন্টে কয়েক ডজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংঘর্ষের প্রতিবেদন’ বর্ণনা করে বলেছে, দেশটির বিজ্ঞানমন্ত্রী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছেন। ছাত্ররা রবিবার অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করছিল। তেহরান, ইয়াজদ, কেরমানশাহ, সানন্দাজ, শিরাজ এবং মাশহাদের মতো বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ হতে দেখা যায়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টে দেখা যায়, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা, খামেনির মৃত্যু’ স্লোগান দিযচ্ছে। অধিকার গোষ্ঠীগুলির ভিডিও অনুসারে বিক্ষোভে ক্রমবর্ধমান নিহতের সংখ্যা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ছোঁড়া কাঁদানে গ্যাস, কিছু জায়গায় গুলি বর্ষণ সত্ত্বেও বিক্ষোভ থামেনি। নরওয়ে ভিত্তিক গোষ্ঠী ইরান হিউম্যান রাইটস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এখন পর্যন্ত ইরান জুড়ে ১৩৩ জন নিহত হয়েছে যার মধ্যে ৪০ জনের বেশি লোক গত সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী জাহেদানে সংঘর্ষে মারা গেছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ মৃতের সংখ্যা জানায়নি। যদিও দাবি করেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্যকে ‘বিদেশী শত্রু সমর্থিত দাঙ্গাবাজ এবং গুণ্ডাদের’ মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। গত সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ ৪১ জন মারা গেছে। ইরানের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি দেশব্যাপী বিক্ষোভের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। বিক্ষোভ এখন পর্যন্ত ইরানের ৩১টি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তাতে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ অংশ নিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সরকারপন্থী ছাত্রদের একটি ভিডিও শেয়ার করেছে। ভিডিওতে দেখা যায় তারা মাশহাদের ফেরদৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হয়ে ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র আমাদের রেড লাইন’ বলে স্লোগান দিচ্ছে। এর আগে রবিবার, ইরানের আইন প্রণেতারা ব্যাপক সরকার বিরোধী বিক্ষোভের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের সমর্থনে পার্লামেন্টের অধিবেশন চলাকালীন ‘ধন্যবাদ, পুলিশ’ স্লোগান দিয়েছিলেন।
ইরানে প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাঙ্গা পুলিশের সংঘর্ষ
0
Share.