স্পোর্টস ডেস্ক: স্কটল্যান্ড প্রথম ইউরোপীয় দেশ যারা শিশুদের ফুটবল খেলায় হেড করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। কিন্তু হেড ছাড়া ফুটবল কেমন হতে পারে। তবে এর জবাব দিতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক খেলোয়াড়রা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে- এমন রিপোর্ট পাওয়ার পরই স্কটিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন-এফএ এমন উদ্যোগ নিয়েছে। এটা বহু মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছে যে হেড করতে পারে এমন খেলোয়াড় ছাড়া ফুটবল কেমন হতে পারে। এটা দেখার একটা উপায় হতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকানো, যারা ইতোমধ্যেই তরুণদের ফুটবলে হেড করাকে নিষিদ্ধ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে ফুটবলে পরিবর্তন আনতে কোন বিষয়টি প্রভাবিত করেছে?
২০১৪ সালে একদল খেলোয়াড় ও তাদের অভিভাবকরা ফিফা, ইউএস সকার ও আমেরিকান ইয়ুথ সকার অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি মামলা করলে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল যা সকার নামে পরিচিত তারা নিয়ম পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। এতে ফুটবল খেলার সময় মুখোমুখি সংঘর্ষের প্রভাব নিয়ে অবহেলার অভিযোগ আনা হয় এবং অনূর্ধ্ব ১৭’র খেলোয়াড়রা কতবার বলে হেড করতে পারবে তার একটি সংখ্যা বেধে দেয়ার কথা বলা হয়। এটাই ইউনাইটেড স্টেটস সকার ফেডারেশনকে একটি ম্যান্ডেট দেয় ২০১৫ সালে- তাদের রিকভার প্রোগ্রামে দশ বছর বা তার কম বয়সী খেলোয়াড়দের হেড করা নিষিদ্ধ করা হয় এবং ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সীদের হেড করার চর্চা কমিয়ে আনার কথা বলা হয়। ২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারি নিয়মটি কার্যকর হয় এবং সেটি বাস্তবায়িত হয় প্রতিটি ইয়ুথ ন্যাশনাল টীম ও একাডেমীর এবং মেজর লীগের সকার ক্লাব গুলো ইয়ুথ টীমগুলোতে।
তারা কী নিয়ম চালু করেছে?
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, দশ বছর বা তার কম বয়সী খেলোয়াড়দের বলে হেড করা শেখানো হবেনা এবং ম্যাচে ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করা যাবেনা। কোন খেলোয়াড় ইচ্ছাকৃতভাবে হেড করলে প্রতিপক্ষ দল ফ্রি কিক সুবিধা পাবে একই জায়গা থেকে। আর গোল এরিয়াতে হলে গোল এরিয়া লাইনের সমান্তরাল থেকে ইনডিরেক্ট ফ্রি কিক সুবিধা পাবে প্রতিপক্ষ দল। ১১ ও ১২ বছর বয়সীরা শিখতে পারবে ও ম্যাচে হেড করার অনুমতি পাবে। তবে প্রশিক্ষণে এটায় জোর দেয়া হবে যে হেডিং সপ্তাহে ত্রিশ মিনিটে সীমাবদ্ধ থাকবে। নিয়মে আরও বলা হয় হেড ইনজুরি হলে খেলোয়াড় পরিবর্তন করতে হবে পর্যবেক্ষণের জন্য।
এর প্রভাব কেমন হয়েছে : তিন বছর ধরে এ পরিবর্তন হয়েছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে জানা যাচ্ছেনা। তবে এটি তরুণ খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণে আমূল পরিবর্তন এনেছে। “আমি প্রথমে সন্দিহান ছিলাম কিন্তু আমি এখন এটি করছি,” বলছিলেন ফিলাডেলফিয়া ইউনিয়ন একাডেমীর কোচ টমি উইলসন। বিভিন্ন বয়সীদের মধ্যে এখন ভাগ করে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। “বয়সের সাথে যায় এমন কিছু শেখানো যেতে পারে। আপনি হালকা বল ব্যবহার করতে পারেন যাতে তারা কোনো চাপ অনুভব না করে”। এজন্য মেডিকেল প্রফেশনালদের সহায়তার কথাও বলছেন কোচরা।
বীমা ঝুঁকি : সাবেক খেলোয়াড় মাইক ওয়েবস্টার ২০০২ সালে ৫০ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর তার মস্তিষ্ক পরীক্ষা করেন ড: বেনেট ওমালু। তিনি তখন দেখতে পান মস্তিষ্কের একটি টিস্যু ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ড: ওমালু নতুন একটি রোগের আবিষ্কার করেন ও এর নাম দেন ক্রনিক ট্রমাটিক এনসেফ্যালপ্যাথি। যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ফুটবল লীগ এনএফএল শুরুতে ধীরগতিতে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। কিন্তু ২০১৮ সালে জানা যায় ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলা হেড ইনজুরিকে বিমার আওতায় রাখতে ক্রমাগত অনিচ্ছুক হয় উঠছে। এটা জানা হয় যে কেউ দুর্ঘটনার শিকার হলে কোনো সহায়তাই পাবেনা। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে দি ব্রেইন ইনজুরি চ্যারিটি হেডওয়ে ফুটবল থেকে ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণার কথা বলে। “প্রশ্ন উঠেছে বয়স নিয়েও। বলা হচ্ছে ১২ বছর বয়সের কথা। এর মানে ১৩ বছর বয়সীর জন্য বলে হেড করা নিরাপদ”। দ্যা স্কটিশ এফএ’র ১২ বছরের কম বয়সীদের জন্য হেড করা নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ দুনিয়া জুড়ে জাতীয় ফুটবল সংস্থাগুলোর জন্য বড় প্রশ্ন তৈরি করবে। স্কটিশ এফএ’র সাবেক প্রধান নির্বাহী গর্ডন স্মিথ প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন তরুণরা এরপরেও টেকনিকগুলো শিখতে পারে হালকা বল ব্যবহারের মাধ্যমে। “আমাদের প্লাস্টিকের বল ব্যবহার করা উচিত যখন তরুণদের শেখানো হবে। তাদের বলা হবে হেডিং খেলার অংশ কিন্তু এখন তারা বড় বলে সেটি করতে পারবেনা। তাই সফট বল ব্যবহার করে তাদের টেকনিক উন্নত করাটাই ভালো হবে যাতে করে এর কোনো প্রভাব পরবর্তীতে না পড়ে”।